ঢাকা,  মঙ্গলবার  ২৩ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

রসিক নির্বাচন : প্রচারণা শেষ, কাল ভোট উৎসব

প্রকাশিত: ১১:৩০, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২

রসিক নির্বাচন : প্রচারণা শেষ, কাল ভোট উৎসব

রসিক নির্বাচন

রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা রোববার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। প্রচার উৎসবের শেষদিন সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকে সরগমর হয়ে উঠেছে পুরো রংপুর মহানগর। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরের অলিগলি মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের সরব উপস্থিতিতে শেষবেলায় জমে উঠেছে গণসংযোগ আর পথসভা। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে প্রার্থীরা নিজ নিজ প্রতীকে ভোট চাওয়ার সঙ্গে দেন নানা প্রতিশ্রুতি।

এদিকে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে দুই-একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মেয়র প্রার্থীদের প্রচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রার্থীদের মাঝে বাকযুদ্ধ থাকলেও প্রচারণা ঘিরে ছিল না কোনো উত্তেজনা। উৎসবের প্রচারণা শেষে আগামীকাল অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে এমনটাই প্রত্যাশা প্রার্থীসহ নগরবাসীর।

এবার নির্বাচনে মেয়র পদে ৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও প্রচারণার মাঠে আলোচনায় জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার লাঙ্গল, আওয়ামী লীগের হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার নৌকা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলনের প্রতীক হাতি। ভোটারদের দাবি এই তিন প্রার্থীর মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সদ্য সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলছেন একতরফা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এতে আবারও বিশাল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন তিনি এমনটাই আশা ব্যক্ত করেছেন। আর সরকারদলীয় প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার দাবি উন্নয়ন বঞ্চিত রংপুর নগরের জনগণ নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করেছেন। এবার রংপুর সিটিতে নৌকা প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত।

গতকাল বেলা ১১টায় নগরীর স্টেশন রোড জীবন বীমা মোড় হতে প্রচারণা শুরু করেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। অন্যদিকে নগরীর পায়রা চত্বর থেকে প্রচার শুরু করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন প্রচার শুরু করেন সেন্ট্রাল রোড থেকে।

গণ সংযোগকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ভোট নিয়ে আমাদের কোনো শঙ্কা নেই। তবে নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপি করতে আসা যেকোনো অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে আমরা প্রস্তুত আছি। নির্বাচন কমিশন একটা ফেয়ার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার কমিটমেন্ট করেছে, আমরা সেই নিরিখে আস্থা রেখে নির্বাচন করছি। আমরা মনে করি এই নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।

সাবেক এই মেয়র বলেন, আমার আগের সরকারি দলের মেয়র পাঁচ বছরে ২৭০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করলেও আমার আমলে সাড়ে ১২০০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনী ইশতেহারের প্রধান এজেন্ডা রংপুরের প্রাণ শ্যামাসুন্দরী খাল দখলমুক্ত করতে আমার আমলে একটি সমন্বিত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে মেয়র হিসেবে আমার করা উন্নয়ন, জন সম্পৃক্ততা বিবেচনা করে লাঙ্গলের পক্ষে গণজোয়ার উঠেছে।

মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা আরও বলেন, এছাড়া এই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী না থাকায় এবং জামায়াতের এক প্রার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ায় সেই উত্তাপ নেই। এবার লাঙ্গলের পক্ষে জনগণের সৃষ্ট গণজোয়ারে নির্বাচন একতরফা হবে।

ইভিএম নিয়ে শঙ্কা না থাকলেও এর পেছনের কারিগরদের নিয়ে শঙ্কা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইভিএমে ভোটগ্রহণ নিয়ে গাইবান্ধার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে শান্ত রংপুর আগ্নেয়গিরিতে পরিণত হবে। ইভিএম নিয়ে বিরোধীদলগুলোর যে অনাস্থা তা প্রকট হবে। এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি জাতীয় রাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।

অন্যদিকে সেন্ট্রাল রোড এলাকায় গণসংযোগকালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া বর্ধিত ওয়ার্ডের উন্নয়নসহ নগরীর যানজট ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও পরিকল্পিত উন্নয়নে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আধুনিক রংপুর নগর গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এসময় সাবেক এই সংসদ সদস্য সাংবাদিকদের বলেন, নৌকার পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার উঠেছে। আগামী ২৭ ডিসেম্বর বিপুল ভোটে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত। রংপুর যে নৌকার ঘাটি তা প্রমাণ হবে এ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। অতীতে রংপুরের পরিকল্পিত উন্নয়ন করেনি কোনো নগরপিতা।

ডালিয়া বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরবাসীকে বিভাগ, সিটি করপোরেশন, মেট্রোপলিটন পুলিশ, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চারলেন সড়ক, গ্যাস সংযোগ, হাইটেক পার্ক উপহার দিয়েছেন। তাই রংপুরবাসীর উচিত এবার নৌকায় ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের বিজয় উপহার দেওয়া।

ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আর ভুল করলে চলবে না। ৪৭ বছরেও রংপুরের কোনো উন্নয়ন হয়নি, নৌকার প্রার্থী নির্বাচিত না হলে আগামীতেও পর্যাপ্ত উন্নয়ন হবে না। তাই নৌকায় ভোট দিয়ে একটি আধুনিক ও স্মার্ট সিটি করপোরেশন গড়তে আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে কৃষিভিত্তিক শিল্পনগরী ও পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরিকল্পিত নগরী গড়তে চান আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন। অন্যসব প্রার্থীর মতো তিনিও সড়কের অবকাঠামো উন্নয়ন, সড়ক বাতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, বিনোদন, স্বাস্থ্য, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বস্তিবাসীর উন্নয়নসহ যানজট ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এবার সাতটি রাজনৈতিক দলের সাতজনসহ নয়জন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। জামায়াতে ইসলামীর এক নেতা তফসিল ঘোষণার আগে থেকে প্রচারণা চালানোর পর মনোনয়নপত্র কিনলেও শেষ পর্যন্ত তিনি জমা দেননি।

ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা

ভোটাররা বলছেন, প্রচারণা ও গণসংযোগে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এগিয়ে রয়েছেন। সমানতালে প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন। নয়জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে এই তিন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন তারা। তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়ালের কর্মী-সমর্থকরা বলছেন লাঙ্গল প্রতীকের সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নৌকার চেয়ে হাতপাখার এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা বেশি।

নগরীর প্রেসক্লাব এলাকার বাদশা মিয়া, শাপলা চত্বরের মিজানুর ও পায়রা চত্বরের হাবিবুর রহমান ও কুকরুল এলাকার আল-আমিনসহ আরও বশে কয়েকজন জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এখন পর্যন্ত সবদিক থেকে এগিয়ে আছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার ভোট ভাগ হয়ে কিছু যাবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলনের বাক্সে। এজন্য আবারও মোস্তফা মেয়র হয়ে যেতে পারেন। তবে মূলত নৌকা-লাঙ্গল-হাতি প্রতীকের তিন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে। তাদেরও জয়ের সম্ভাবনা আছে।  

এবার মেয়র পদে জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির আবু রায়হান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেহেদী হাসান বনি ও লতিফুর রহমান মিলন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন, জোরদার নিরাপত্তা

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্নের লক্ষ্যে প্রায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করার পাশাপাশি ইভিএম ব্যবহার উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্টসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ইভিএম সম্পর্কে ধারণা প্রদানসহ ভোটদান প্রক্রিয়া তুলে ধরে শেষ করা হয়েছে দুদিনের মক ভোট।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে ৩৩টি ওয়ার্ডে নিয়োগ করা হয়েছে ম্যাজিস্ট্রেট। মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। পুলিশের থাকছে র‍্যাব ও বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্স। নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা, নির্বাচনী এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণ ও নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করতে হবে। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কর্তৃক গৃহীত ওই সিদ্ধান্তগুলোর সংশ্লিষ্টতা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এদিকে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করার জন্য প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে মোট ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়েছে কমিশন। এজন্য মাঠে নেমেছেন ৪৯ জন নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। এর মধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ৩৩ জন এবং বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ১৬ জন। নির্বাচনী অপরাধ রোধ, বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে দায়িত্বপালন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নিমিত্তে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন তারা।

প্রতি দুই ওয়ার্ডের জন্য একজন করে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। তবে ২৯, ৩০ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য থাকবেন একজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। মোট ১৬ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর-এর সেকশন-১০ অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত বিচার কাজ সম্পন্ন করবেন। তারা ভোটের এলাকায় থাকবেন ২৫ ডিসেম্বর থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এদিকে, কেবল ম্যাজিস্ট্রেট নয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও এক সময়ের জন্য মাঠে নামছেন।

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন জানান, রোববার রাত ১২টায় নির্বাচনী আনুষ্ঠানিক সব প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। প্রার্থীরা আর কোনো ধরনের প্রচারণা করতে পারবেন না। নির্বাচনে ১১জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।

ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে যে পরিমাণ ইভিএম ব্যবহার হবে, তার দ্বিগুণ ইভিএম আমরা প্রস্তুত রেখেছি। কোনোখানে ইভিএমএ সমস্যা হলে সেটি কেন্দ্রে থাকা টেকনিক্যাল লোকজন ঠিক করে দেবে। যদি তারা ব্যর্থ হয় তবে মোবাইলে থাকা টেকনিক্যাল টিম সেটি ঠিক করবে। যদি তারাও ঠিক করতে না পারেন, তাহলে ওই কেন্দ্রের ভোট যতটুকু ওই ইভিএমে নেওয়া হয়েছে ততটুকু অক্ষুণ্ণ থাকবে। সবার উপস্থিতিতে সেটিও সংরক্ষণ করে রাখবে এবং নতুন আরেকটি ইভিএম ব্যবহার করবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা পুরো নির্বাচনী এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেবো। প্রতিটি কেন্দ্রে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করব। এর বাহিরে পুরো রসিক এলাকায় ১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। দুটি কেন্দ্রের জন্য একটি করে র‍্যাবের টিম থাকবে। কেন্দ্রে পুলিশ অস্ত্রসহ এবং অস্ত্র ছাড়া থাকবে। বিজিবি ও র‍্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে থাকবে। আর টহল টিমের পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, ২২৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮৬টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। সবাই যাতে নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন এর জন্য সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়েছে। ভোটার ছাড়া অন্য কেউ ভোটকক্ষের গোপন বুথে প্রবেশ করতে পারবেন না। প্রবেশ করলেই সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়বে এবং তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ভোটার, প্রার্থী ও কেন্দ্র

রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। ভোটার চার লাখ ২৬ হাজার ৪৭০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার দুই লাখ ১৪ হাজার ১৬৬ জন, পুরুষ ২ লাখ ১২ হাজার ৩০৩ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার একজন।

তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠেয় রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৯ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৮৩ জন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৬৮ জনস সর্বমোট ২৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে ৩০নং ওয়ার্ডে একজন সাধারণ কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৮ জুন ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন গঠনের পর ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেবার এক লাখ ৬ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট এবং বিএনপি নেতা কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ২১ হাজার ২৩৫ ভোট।

২০১২ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন তিন লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭৯ হাজার ১২৮ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৭৮ হাজার ৬১৪ জন।

দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এক লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু পেয়েছিলেন ৬২ হাজার ৪০০ ভোট এবং বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ৩৫ হাজার ১৩৬ ভোট। ওই বছর ভোটার সংখ্যা ছিল তিন লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৬ ও নারী এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৮ জন।

তৃতীয় দফায় আগামীকাল ২৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার মহানগরের ২২৯টি কেন্দ্রের ১ হাজার ৩৪৯টি কক্ষে সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ২২৯ জন এবং সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা থাকবেন ১ হাজার ৩৪৯ জন। মোট পোলিং অফিসার থাকবেন দুই হাজার ৬৯৮ জন।