ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ১৮ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

এ যেন- ঝরা পাতার গালিচা

প্রকাশিত: ১৭:৫৬, ২৮ মার্চ ২০২৩

এ যেন- ঝরা পাতার গালিচা

এমন দৃশ্যের দেখা মিলে পাহাড়, সবুজ আর প্রাণীর অভয়ারণ্যখ্যাত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।

কেমন লাগবে ঝরা পাতার উপর দিয়ে হাটতে? শুকনো পাতার মড়মড় শব্দে এক ভিন্ন অনুভূতি নিশ্চয়ই জাগিয়ে তুলবে। প্রাণ খুলে গাইতে ইচ্ছে করবে,

‘ও ঝরা পাতা, ও ঝরা পাতা-গো/
তোমার সাথে আমার রাত পোহানো কথা গো/
তোমার সাথে আমার দিন কাটানো কথা।’ 

বিদায় নিয়েছে শীত। প্রকৃতির রূপময় নিসর্গ ছুঁয়েছে বসন্ত। চারিদিকে ফুলের শোভা। কালো পিচের রাস্তা ঢেকে আছে ঝরে পড়া হলুদ আর বাদামি রঙা শুকনো পাতায়। পায়ের তলায় মর্মর শব্দে ভাঙছে পাতারা। অশান্ত বাতাসে ঝরাপাতাগুলো উড়ছে এদিক-ওদিক। এমন দৃশ্যের দেখা মিলে পাহাড়, সবুজ আর প্রাণীর অভয়ারণ্যখ্যাত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি)।

 

অশান্ত বাতাসে ঝরাপাতাগুলো উড়ছে এদিক-ওদিক।

অশান্ত বাতাসে ঝরাপাতাগুলো উড়ছে এদিক-ওদিক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটা পাহাড় রাস্তা ছাড়াও ফরেস্ট্রি রাস্তা, সোহরাওয়ার্দী রাস্তা, শাহজালাল হলের খেলার মাঠ দেখে মনে হবে লাল গালিচায় মোড়ানো। শহিদ আবদুর রব হলের আঙিনা, বিজ্ঞান অনুষদের রাস্তা হলুদ, বাদামি রঙের ঝরা পাতার আস্তরণে বন্দী। চাকসু ভবনের পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তার দু-ধারের জারুল, দেবদারু গাছের পাতাশূন্য শুকনো ডালগুলোতে সবুজরঙা নতুন কিশলয় উঁকি দিচ্ছে। নতুন কিশলয়ের পসরা তরুলতায় যেন নতুন হয়ে উঠেছে পুরোনো পৃথিবী। লাইব্রেরি আর মসজিদের সামনে ঘুরে দেখা যায়, নুয়ে পড়া রাশিয়ান স্প্রুচ গাছটাতেও বসন্তের হাওয়া লেগেছে। বসন্তের হাওয়া লেগেছে বাগানের ফুলেও। মুখোমুখি ডালপালা ছড়ানো বড় গাছগুলোতেও কমতি নেই প্রাণের জোয়ার। বসন্ত হাওয়ার স্পর্শে শাহ আবদুল করিম গেয়েছেন, ‘বসন্ত বাতাসে সই গো, বসন্ত বাতাসে, তোমার বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে... ’

এমন দৃশ্যে মুগ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্য ছাড়াও আগত দর্শনার্থীরা। ঝরাপাতা আর প্রকৃতির সংস্পর্শে প্রতিদিনই ভীর করছেন অসংখ্য মানুষ। বিশেষ করে ফরেস্ট্রি রাস্তা যেন ছবি তোলার ‘হট জোন’! 

কথা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রেদওয়ান আহমদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঋতুরাজ বসন্ত যেন চির রঙিন করে তুলেছে চবি ক্যাম্পাসটিকে। পাঁজর ফাটিয়ে হাসছে যেন চবির পিচঢালা রাস্তায় হলুদ বাদামি ঝরা পাতারা। এর ওপর দিয়ে হাটার সময় সত্যিই অসাধারণ এক অনুভূতি জেগে ওঠে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ আর ফুলের সৌরভে মুখরিত পুরো ক্যাম্পাস। বসন্ত যেন তার আপন সাজে আমাদের ক্যাম্পাসকে সাজিয়েছে নতুন বধূ রূপে। বসন্তের এই বৈচিত্র্যে পাহাড়, অরণ্য ও প্রকৃতির রাজ্যে ঘেরা এই একুশশত একরের ক্যাম্পাস, যেন দুহাত বাড়িয়ে কাছে ডাকছে।

 

এমন দৃশ্যে মুগ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্য ছাড়াও আগত দর্শনার্থীরা।

এমন দৃশ্যে মুগ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্য ছাড়াও আগত দর্শনার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরাও মুগ্ধ চবির সৌন্দর্যে। রাউজান উপজেলা থেকে এসেছেন সুমাইয়া এবং তার দুই ভাই। জয় বাংলা চত্বরে কথা হয় তাদের সঙ্গে। বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেইটে দিয়ে প্রবেশ করেছি, দুই পাশের সারি সারি বৃক্ষ, পাহাড়ের বুক চিরে ছুটে চলা রাস্তা ধরে আসতেই এতক্ষণের বিষণ্ণতা ভুলিয়ে দিয়েছে বসন্তের বিকেলের পিচঢালা রাস্তায় পড়ে থাকা পাতাগুলো দেখতে বেশ সুন্দর। আমের মুকুল, হালকা বাতাসে ঝরা পাতাদের পড়ে থাকা আর পাতা শূন্য গাছের ডালে ডালে গজানো নতুন কুড়ি দেখতে অসাধারণ লাগছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, দুই ধরনের গাছের সংখ্যা বেশি, এরমধ্যে আছে পত্র ঝরা উদ্ভিদ আর অর্ধ পত্র ঝরা উদ্ভিদ। এখন এই সময়ে যেসব গাছের পাতা ঝরে যাচ্ছে সেগুলো পত্র ঝরা উদ্ভিদের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- শাল গাছের কথাই বলি, দেখবেন এই সময়ে সব পাতা পড়ে গিয়ে গাছটিকে মৃত মনে হবে। তবে বৃষ্টি বা পানির স্পর্শ পেলে পুনরায় আগের মতো হয়ে যাবে। আবার অর্ধ পত্রঝরা উদ্ভিদগুলোর কিছু পাতা পড়বে সঙ্গে সঙ্গে নতুন পাতা গজাবে। 

 

উদ্ভিদগুলোর কিছু পাতা পড়বে সঙ্গে সঙ্গে নতুন পাতা গজাবে। 

উদ্ভিদগুলোর কিছু পাতা পড়বে সঙ্গে সঙ্গে নতুন পাতা গজাবে। 

গাছেদের পাতা ঝরতে ঝরতে একটা সময় শেষ তো হয়ে আসবেই। গাছটা ফাঁকা-ফাঁকা দেখাবে। পাশাপাশি ধরবে সবুজ কচি পাতা। সব পাতারই বোধহয় এক বছরের জীবন। এই একবছরের জীবনেই তাদের শৈশব, কৈশোর, যৌবন এবং বার্ধক্য কেটে যায়। আবার, আগামী ফাল্গুনে তাদের দিন ফুরবে, ঝরে পড়বে মাটিতে প্রকৃতির নিয়মে। এভাবে বোধহয় মানুষের জীবনও বদলে যাবে। জীবনের নির্মম সত্য প্রকৃতি যেন চোখে আঙুল দিয়েই স্মরণ করিয়ে দেয়। মনের অজান্তেই হয়তো সুর ভেসে আসে, ‘জীবনের সোনাঝরা দিনগুলো সব/ শীতের পাতার মতো ঝরে যায়...।’