ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

গুচ্ছ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

গুচ্ছ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ

ফাইল ছবি

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয়বারের মতো দেশের ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে অংশ নেয়। তবে সার্বিক প্রক্রিয়া সহজতর করতে গিয়ে এবারও গ্যাঁড়াকলে পড়েছে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যার ব্যতিক্রম নয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বারবার মেধাতালিকা ও গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েও আসন কোনোভাবেই পূর্ণ হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়টির। প্রায় দেড়শত আসন ফাঁকা রেখেই প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। 

জানা যায়, ভর্তি কার্যক্রমে অধিক কালক্ষেপণের ফলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়েছে দেরিতে। যার ফলে তারা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একই সেশনের শিক্ষার্থীদের চেয়ে সময়ের দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছে। আর ফাঁকা আসন পূরণে ন্যূনতম পাস নম্বর পেয়েই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এতে করে সার্বিকভাবে গুচ্ছের গ্যাঁড়াকলে নিজস্ব জৌলুস হারিয়েছে দাবি করে অসন্তোষ জানিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এমন পরিস্থিতির জন্য গুচ্ছের দীর্ঘ প্রক্রিয়া, সমন্বয়হীনতার, সময়ক্ষেপণ, অধিকতর সুযোগ দানের প্রভাবকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মিলিত (ঘ) ইউনিট বন্ধ হওয়ায় আসনগুলো সহসা পরিপূর্ণ না হবার কারণ বলে মনে করেন অনেকে। তাই, গুচ্ছ বাদ দিয়ে নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরা এবং পুনরায় সম্মিলিত (ঘ) ইউনিট চালু কিংবা বিজ্ঞান ইউনিটের শিক্ষার্থীদের জন্য মানবিক অনুষদে বরাদ্দ বিভাগগুলোতে আসন কমানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

এরই মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কর্তৃপক্ষের কাছে নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরার দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি অনুষদ থেকে উপাচার্যের কাছে গুচ্ছ থেকে বের হয়ে নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতির পক্ষে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এবছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে থাকবে নাকি নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফিরবে সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

অপরদিকে দেশের শীর্ষ চার বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে না আসায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়েও শুরু থেকেই প্রশ্ন থাকে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের। আবার ন্যুনতম পাস নাম্বার পেয়েই শিক্ষার্থীদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া বিগত বছরগুলোর সব অর্জনকে ম্লান করেছে বলে দাবি শিক্ষকদের।  

জানা যায়, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের সার্বিক ভোগান্তি হ্রাস ও সুবিধার্থে আয়োজনের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে তার চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই প্রেক্ষাপটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থীসহ সব মহল থেকে পূর্বের ন্যায় নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরার দাবি জানানো হলেও সেটিতে সাড়া দেয়নি প্রশাসন। দ্বিতীয়বার গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে এখনও ধুকছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের দাবি, অতি অল্পসময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যতোটা এগিয়েছিল, দুইবার গুচ্ছে যাওয়ায় অনেকটা আবার পিছিয়ে গেছে। গুচ্ছ পদ্ধতির অসংগতির ফলেই এবার শিক্ষার্থী সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বারবার গণ সাক্ষাৎকার দেওয়ায় এখানে মেধার কোনো মূল্যায়ন হয়নি। যারা নম্বর পেয়েছেন, তারাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। তাই এবছর থেকে আবারো নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরার দাবি তাদের।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে সদ্য ভর্তি শিক্ষার্থী রাইহান উদ্দিন বলেন, আমি বিজ্ঞান ইউনিটের শিক্ষার্থী হয়েও আমাকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়তে হচ্ছে। আমার প্রথম চয়েস ছিল ফার্মেসী বিভাগ। আমার ইচ্ছাও ফার্মেসী বিভাগে অধ্যয়ন করা কিন্তু সিরিয়ালে আমার পজিশন পিছনে থাকায় বাধ্য হয়ে আমাকে সাংবাদিকতা বিভাগে পড়তে হচ্ছে। 

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ.কে.এম লুৎফর রহমান বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে যে মানের দরকার ছিল সেটা নেই। এর ফলে উল্টো শিক্ষার্থীরাই এক প্রকার হয়রানির স্বীকার হচ্ছে, সেশন জটও বাড়ছে। আমরা গতবারও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত বেশকিছু দাবি জানিয়েছিলাম কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু সেই দাবিগুলো মানা হয়নি। এবছর আমরা আবারো দাবি জানিয়েছি, নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরার জন্য। বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিলেই হয়তো এটার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সম্মিলিত (ঘ) ইউনিট নেই। ফলে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান ইউনিটে পরীক্ষা দিয়েও যারা সিরিয়ালে পেছনের দিকে আছে তারা কলা অনুষদের বিষয় বরাদ্দ পাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা কলা অনুষদের বিষয় পড়তে আগ্রহী না। ফলে তাদেরকে চাইলেই জোর করে ভর্তি করানো সম্ভব না। যদি (ঘ) ইউনিট থাকে তাহলে সেখানে তারাই পরীক্ষা দিবেন, যারা কলা অনুষদের বিষয় পড়তে চান। আর যারা বিজ্ঞানের বিষয় পড়তে চাইবে, তারা বিজ্ঞানের নিজস্ব ইউনিটে পরীক্ষা দিবে। এর ফলে আসন পরিপূর্ণ হতে তেমন জটিলতা বা সময়ক্ষেপণ হবে না। তাই আবারো সম্মিলিত ইউনিট চালুর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাহলে পরবর্তী বছরে আসনগুলো পরিপূর্ণ হতে এত সময় লাগবে না বলে আশা করা যায়।

সার্বিক বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, গুচ্ছ নিয়ে সবার মধ্যেই অসন্তোষ আছে। আমরা সর্বশেষ মিটিংয়ে এ নিয়ে কথা উঠেছে। তবে গুচ্ছ বিষয়ে খুব শীঘ্রই আমাদের বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং হবে। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।