ঢাকা,  শুক্রবার  ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বাকৃবি আর ব্রহ্মপুত্র: শিক্ষাঙ্গন পেরিয়ে মায়া জড়ানো সম্পর্ক

প্রকাশিত: ২২:১৫, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাকৃবি আর ব্রহ্মপুত্র: শিক্ষাঙ্গন পেরিয়ে মায়া জড়ানো সম্পর্ক

ছবি: সংগৃহীত

পড়ন্ত বিকেলে ঝিকমিক রোদে পানি যেন জলমল করে। দেখা মিলবে, ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা। মাঝি আপন মনে গান গেয়ে পাল তুলে দৌড়ে বেড়ায়। পাখির আনাগোনায় বদলে যায় পরিবেশ। মধুর কণ্ঠে ডাকতে থাকে নদীর ধারা। নদীর পাড় দাঁড়িয়ে নৌকার যাতায়াত দেখতেই মন চায়। এ দৃশ্য ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) সীমানার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মায়া জড়ানো ব্রহ্মপুত্র নদের।

ব্রহ্মপুত্র নদ পৃথিবীর দীর্ঘতম নদ-নদীগুলোর একটি। এর অববাহিকা অঞ্চল চীন (তিব্বত), ভারত ও বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই বিশাল নদটির প্রভাবিত এলাকার আয়তন ৫ লাখ ৮৩ হাজার বর্গ কি.মি.। যার ৪৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের অবস্থান বাংলাদেশ এলাকায়। 

দেশের দীর্ঘতম এই নদ বাকৃবি ক্যাম্পাসের সীমানা ঘেঁষা পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। আর এ নদই বিনোদনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ময়মনসিংহের আশেপাশের মানুষের। তাইতো সবাই একটু সময় পেলেই ছুটে আসে ব্রহ্মপুত্রের কাছে। 

 

বিনোদনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ময়মনসিংহের আশেপাশের মানুষের।

বিনোদনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ময়মনসিংহের আশেপাশের মানুষের।

দুপুরের পর থেকে নদের পাড়ে সবার আনাগোনা বাড়তে থাকে। দুপুরের ক্লান্তিতে নদের শান্ত সব পরিবেশ এক অন্যরকম মায়া তৈরি করে। নদীর পাড়ের এই নিস্তব্ধতা মোহিত করে যে কাউকে। দুপুরটা যত গড়াতে থাকে, বাড়তে থাকে ভিড় আর কোলাহল। 

বাকৃবির শিক্ষক, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারী থেকে শুরু করে আশেপাশের এলাকা, এমনকি দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ এখানে এসে ভিড় জমায়। আর তখনি উড়তে শুরু করে রং-বেরঙের পাল তৌলা নৌকার ছোটাছুটি। নদের এপাশ থেকে ওপাশ যাওয়া যাওয়া মাত্র ২০ টাকায়। আবার ১০০-১৫০ টাকায় ঘণ্টা চুক্তি নিয়ে দলবেঁধে নদের বুকে ঘুরে বেড়ানো যায়। নদীর ওপাশে কিছুটা চর, সেখানে ফসলি ফলায় স্থানীয়রা। একটু দূরেই রয়েছে ছোট ছোট গ্রাম। নদের পার ঘেঁষা চরেও রয়েছে চায়ের বেশ কিছু স্টল। এখানে বসেও চা খেতে খেতে নদের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। 

 

এখানে বসে চা খেতে খেতে নদের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। 

এখানে বসে চা খেতে খেতে নদের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। 

ময়মনসিংহ শহর থেকে পরিবার নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে এসেছেন মাহমুদুল হাসান। কেন ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে ঘুরতে আসলেন? জানতে চাইলে তিনি জানান, সপ্তাহে একটি দিন পরিবারের জন্য ব্যয় করেন। এরই অংশ হিসেবে ব্রহ্মপুত্রে নদে আসা। এখানে এলে মনটা হালকা হয়। নির্মল বাতাস, বুক ভরে দম নেওয়া যায়। আর জায়গাটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেওয়া হয়, সে কারণে পরিবার নিয়ে এখানে নিরাপদে ঘোরাফেরা করতে পারি। ময়মনসিংহের ভেতরে এটি নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার জায়গা।

এদিকে নদের পাড়ে মেলা বসে মুড়িমাখা, চা, চটপটি, ফুচকাসহ নানাকিছু। কথা হয়, একজন বিক্রেতার সঙ্গে। সাইফুল ইসলাম নামের এই বিক্রেতা জানান, ‘সারাদিন পুরো ক্যাম্পাসে ঘুরে বিকেলে এখানে চলে আসি। ভিড় থাকে-বিক্রিও বেশ ভালো হয়। তবে, শুধু বিক্রির জন্য না, নিজের ইচ্ছার কারণেই বিকেল হলেই এদিকে চলে আসি। সারাদিনের ক্লান্তির বিশ্রাম নিয়ে যাই একটু। এখানে থাকার পাশাপাশি সবার আনন্দ দেখতে খুব শান্তি লাগে।’