ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

সরকারি বাঙলা কলেজ: ষাট পেরিয়ে একষট্টিতে

প্রকাশিত: ২০:৪৯, ১ অক্টোবর ২০২২

সরকারি বাঙলা কলেজ: ষাট পেরিয়ে একষট্টিতে

ছবি: সংগৃহীত

‘হে প্রভু আমাকে জ্ঞান দাও’ নীতিবাক্য নিয়ে বাংলা ভাষা আন্দোলনের স্থাপ‌তি ও তমদ্দুন মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবুল কাশেম ১৯৬২ সালের এই দিনে বাঙলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। মূলত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিকে ধারণ করে রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত সরকারি বাঙলা কলেজ।

বর্তমানে কলেজটিতে উচ্চমাধ্যমিকসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৮৫ সালে কলেজটিকে সরকারিকরণ করা হয় এবং ১৯৯৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে কলেজটির স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। তবে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ হতে কলেজটির স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়।
কলেজের গৌরব ও ঐতিহ্যের ইতিহাস

১৯৬১ সালে অধ্যক্ষ আবুল কাশেম কতিপয় শিক্ষাবিদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বাঙলা কলেজ স্থাপন করে। বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম ও অফিস-আদালতের ভাষা হিসাবে চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তারা। এ উদ্দেশ্যে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খাঁ, ডক্টর ইন্নাস আলীসহ তমদ্দুন মজলিসের কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে একটি প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির উদ্যোগে কয়েকটি ঘরোয়া বৈঠকের পর দেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে বাংলা একাডেমিতে এক সভার আয়োজন করা হয়। ১৯৬১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ঢাকায় একটি বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা, যার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বাঙলা কলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ১৯৬২ সালের ১ অক্টোবর তা বাস্তবায়ন হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি কলেজ‌টি সরকা‌রিকরণ করা হয়। 

১৯৭১ সালে মহান মুক্তি‌যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বা‌হিনী বাঙলা কলেজ দখল করে নেয়। তারা এখানে ক্যাম্প স্থাপন করে নির্বিচারে স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের হত্যা ও নারীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করেন। সেই সময়ে বাঙলা কলেজের সাইন‌বোর্ড সরিয়ে ‘উর্দু কলেজ’ সাইনবোর্ড লাগানো হয়। দীর্ঘ নয় মাস অবরুদ্ধ থাকার পর কলেজ‌টি উদ্ধার হয়।

কলেজের অনুষদ ও বিভাগ সমূহ: 

প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে স্নাতক পর্যায়ে ২৫ হাজার এবং স্নাতকোত্তরে ৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। কলেজে বর্তমানে প্রায় ১৯টি বিভাগ রয়েছে। বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে রয়েছে রসায়ন বিভাগ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, গণিত বিভাগ, মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগ, প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগ, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ। কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ইংরেজি বিভাগ, বাংলা বিভাগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, সমাজকর্ম বিভাগ, ইতিহাস বিভাগ, দর্শন বিভাগ, ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ রয়েছে। বাণিজ্য অনুষদের অধীনে রয়েছে হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, অর্থনীতি বিভাগ, মার্কেটিং বিভাগ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ।

এর পাশাপাশি ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনার ব্যবস্থাও চালু রয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগ।

কলেজের আবাসন ও যাতায়াত

প্রায় ২২ একর জায়গার উপর নির্মিত বাঙলা কলেজে বর্তমানে আবাসিকভাবে থাকার জন্য শুধুমাত্র ছাত্রদের জন্য অধ্যক্ষ আবুল কাশেম ছাত্রাবাস নামের একটি হল রয়েছে। সম্প্রতি সরকারি অনুদানে ছাত্রদের জন্য আরো দুইটি হল এবং ছাত্রীদের জন্য একটি হল নির্মাণ কাজ হাতে নিয়েছে কলেজ প্রশাসন, একটি হল তৈরির কাজ এরই মধ্যে চলমান রয়েছে। সরকারি বাঙলা কলেজের আবাসিক হলগুলো হলো- অধ্যক্ষ আবুল কাশেম ছাত্রাবাস, শেখ কামাল ছাত্রাবাস (নির্মাণাধীন), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রাবাস (প্রস্তাবিত), শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী নিবাস (প্রস্তাবিত)। এছাড়াও একটি মসজিদ, সঙ্গে রয়েছে একটি সুপ্রশস্ত মাঠ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৩০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর জন্য রয়েছে মাত্র একটি ৪০সিট বিশিষ্ট বাস।

কলেজের অবকাঠামো ও সংগঠন সমূহ:

কলেজটিতে মোট আটটি ভবন রয়েছে। ভবনগুলো হলো- ভবন-১ (প্রশাসনিক ভবন), ভবন-২ (কলা ভবন), ভবন-৩ (বিজ্ঞান ভবন), ভবন-৪, ভবন-৫ (বাণিজ্য ভবন), ভবন-৬, ভবন-৭, ভবন-৮। এছাড়াও একাডেমিক ভবন, গ্রন্থাগার, ল্যাব, আবাসিক হল, বাস, মসজিদ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, অডিটোরিয়াম, সুবিশাল খেলার মাঠ ইত্যাদি। কলেজে রয়েছে সুবিশাল একটি পুকুর ও অনেকগুলো ফুলের বাগান যা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বর্ধন করে। সরকারি বাঙলা কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। সংগঠনগুলোর মধ্যে, বাঙলা কলেজ যুব থিয়েটার (বাকযুথি), বাঙলা কলেজ সাংবাদিক সমিতি (বাকসাস), বাঙলা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটি, বাঙলা কলেজ আবৃত্তি সংসদ, বাঙলা কলেজ সাহিত্য সংসদ, বাঙলা কলেজ চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র সংসদ, বাঁধন (স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন), ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন ক্যাম্পাস, সেভ দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশন, ইয়ুথ গ্রাসিয়াস হিউম্যান, বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট।