ঢাকা,  শুক্রবার  ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

শেকৃবি গবেষণা: দেশেই সম্ভব ভ্যানিলা চাষ

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ১ অক্টোবর ২০২২

শেকৃবি গবেষণা: দেশেই সম্ভব ভ্যানিলা চাষ

ভ্যানিলার ফুল-গাছ-ফল।

পৃথিবীর দ্বিতীয় ব্যায়বহুল মসলা দেশের মাটিতেই বাণিজ্যিকভাবে ফলানোর টেকনোলজি উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড এ এফ এম জামাল উদ্দিন। ২০০৪ সাল থেকে ভ্যানিলার চাষপদ্ধতি ও সহজতর পরাগায়ন নিয়ে গবেষণার পরে সফল হন এই গবেষক। জাফরানের পরেই দামী এই মসলা ‘ব্ল্যাক গোল্ড’ হিসেবে পরিচিত বিশ্বজুড়ে। অধ্যাপক জামাল এর মতে এই মসলার বাণিজ্যিক উৎপাদন প্রভাব রাখবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও।  

ইন্দোনেশিয়া ও মাদাগাস্কার বিশ্বের সর্বোচ্চ ভ্যানিলা উৎপাদনকারী দেশ হলেও এরই মধ্যে ভারতেও শুরু হয়েছে এর বাণিজ্যিক চাষ। বেকারি শিল্প ও নির্যাস শিল্পের অন্যতম উপাদান ভ্যানিলা পডের মূল্য কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। পরাগায়ন জটিলতায় দেশে উৎপাদন না হওয়ায় আমদানির ওপরই নির্ভর করতে হয় বাংলাদেশকে। তাই ভ্যানিলার বাণিজ্যিক উৎপাদনেরে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। 

ভ্যানিলা মূলত অর্কিড জাতীয় গাছ যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উচ্চতায়, আর্দ্র জলবায়ুতে জন্মায়। ছায়া পছন্দকারি উদ্ভিদটি মাটির সংস্পর্শে না আসে সেদিকে খেয়াল রেখে খুটির সঙ্গে নেট দিয়ে কোকোডাস্ট বেধে অবলম্বন তৈরি করে দিতে হবে। গাছটি বেড়ে ওঠার সময় পরাগায়নের সুবিধার জন্য হাত দিয়ে ওঠা-নামা করিয়ে দিতে হবে।

 

শেকৃবি উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড এ এফ এম জামাল উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

শেকৃবি উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড এ এফ এম জামাল উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

মূলত কাটিং পদ্ধতিতে বংশুবৃদ্ধিপ্রাপ্ত এই উদ্ভিদটি জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে দোআশ ঝুরঝুরা মাটিতে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে মাটির pH ৫.৩ থেকে ৫.৬ রাখতে হয়। ভ্যানিলা চারা রোপণের ৩ থেকে ৪ বছর পরে ফুল আসতে শুরু করে। একেকটি থোকায় ১৫-২০টি ফুল থাকে। প্রতিটি ফুল থেকে একটি করে পড হয়। 

ভ্যানিলা উৎপাদনের প্রতিবন্ধকতা এর ফুলের বৈচিত্র্যময় গঠন যা স্বাভাবিক পরাগায়ন এ বাধা দেয়। সাধারণত প্রাকৃতিক পরাগায়নের উৎপাদন খুবই কম হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে কৃত্রিম পরাগায়ন করা হয়ে থাকে। ভ্যানিলা ফুলের পরাগধানী ও গর্ভমুণ্ডের মধ্যে ঠোট সদৃশ একটি পর্দা (রোস্টেলাম) থাকায় পরাগরেণু গর্ভমুণ্ডে পতিত হতে পারে না। তবে অধ্যাপক জামাল উদ্দিন জানান, পর্দাটি নিডল দিয়ে সরিয়ে সামান্য চাপ দিলেই পরাগায়ন সম্পন্ন হয়ে যাবে। তবে কাজটি করতে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন। একজন দক্ষ শ্রমিক দিনে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার ফুল পরাগায়ন করতে পারবেন।  

 

ভ্যানিলা গাছ। ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ

ভ্যানিলা গাছ।

পরাগায়ন থেকে পড পরিপক্ব হতে ৬-৯ মাস সময় লেগে থাকে। বছরে হেক্টরপ্রতি ৩০০-৬০০ কেজি কিউরড পড সংগ্রহ করতে পারবে একজন কৃষক। পড পরিপক্ব হবার শেষের দিকে এতে গ্লুকোভ্যালিন উৎপাদিত হয় যা ফারমেন্টেশনের সময় গ্লুকোজ ও ভ্যানিলিন এ পরিণত হয়। যা থেকেই তৈরি হয় এর মোহনীয় নির্যাস।   

বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করা যাবে এই অর্থকরী ফসল। এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন গবেষক অধ্যাপক জামাল উদ্দিন। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা মাঠে এরই মধ্যে ভ্যানিলা উৎপাদন হচ্ছে। পাশাপাশি প্রাথমিকভাবে ভ্যানিলা কাটিং করে অগণিত ছাদবাগানীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।