ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

সংকটে জোগান ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ১৬:২৬, ১৩ জুন ২০২২

সংকটে জোগান ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংক

অর্থসংকট মেটাতে দুই মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ১ লাখ ১২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা জোগান দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় এ অর্থ দেওয়া হয়। এর মধ্যে গত এপ্রিলে ৪৮ হাজার কোটি এবং মে মাসে দেওয়া হয়েছে ৬৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে তারল্য সংকট আরও বেড়েছে। বাড়তি চাহিদা মেটাতে ওই মাসে ১৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বেশি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১ ও ৫ জুন দেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকগুলোয় মূলত চারটি কারণে তারল্যের প্রবাহ কিছুটা কমছে। এর মধ্যে অন্যতম আমানত ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া। এছাড়া ঋণপ্রবাহ মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি এবং সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নগদ টাকা দিয়ে ডলার কেনার বিষয়টিও আছে।

গত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছিল ৫২ দশমিক ০৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আমানত কমেছে ৪০ দশমিক ২৫ শতাংশ। ওই সময়ে গ্রাহকদের আমানত বাবদ ব্যাংকে টাকার জোগান কমেছে ৫১ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত রেমিট্যান্স বেড়েছিল ৪০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কমেছে ১৬ শতাংশ। ওই সময়ের ব্যবধানে শুধু রেমিট্যান্স কমার কারণে তারল্য কমেছে ৩৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিলে ঋণপ্রবাহ কমেছিল ৪১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ১১৫ শতাংশ। ওই সময়ের ব্যবধানে ঋণ বাবদ ব্যাংক থেকে বেশি বের হয়েছে ৮৫ হাজার কোটি টাকা। আমদানি ব্যয় মেটাতে ব্যাংকগুলোর হাতে পর্যাপ্ত ডলার নেই। যে কারণে নগদ টাকা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৬১২ কোটি ডলার রিজার্ভ থেকে দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। এতে প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে গেছে। ওই সময়ে বাজার থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ডলার কেনেনি। ফলে ডলার বেচাকেনা বাবদ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো টাকা বাজারে আসেনি, উলটা বাজার থেকে টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে গেছে। অথচ গত অর্থবছরে বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বেশি থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে কিনেছিল ৭৯৪ কোটি ডলার। এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নগদ টাকা ব্যাংকগুলোয় এসেছিল ৬৯ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ছেড়েছিল ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে তুলে নিয়েছিল ২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ডলার বেচাকেনা বাবদ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাজারে এসেছিল ৬৭ হাজার কোটি টাকা।

এছাড়াও ব্যাংকে আমানত প্রবাহ কমার নেপথ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আরও একটি অস্বাভাবিক তথ্য। এতে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিলে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে গ্রাহকদের হাতে রাখার প্রবণতা কমেছিল ৯৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ৯ হাজার ১০২ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরে ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা ২৭ হাজার কোটি টাকা বেশি তুলে নিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ব্যাংক থেকে এত বেশিমাত্রায় টাকা বের হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক নয়। করোনার পরে বিনিয়োগ খুব বেশি বাড়েনি। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ও চাঞ্চল্য আসেনি। তারপরও কেন এত টাকা মানুষের হাতে চলে আসছে, তা দেখা দরকার। তবে পণ্যমূল্য যেভাবে বেড়েছে, সে কারণে মানুষের খরচ বেড়েছে। এতে নতুন সঞ্চয়ের সক্ষমতা কমে গেছে। অন্যদিকে আগের সঞ্চয় থেকে টাকা তুলে সংসার পরিচালনা করছে।

এদিকে ৩০ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করা ট্রেজারি বিল বা বন্ড (পুনরায় কিনে নেওয়ার চুক্তি) রেপোর সুদের হার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করেছে। এর আগে ২০২০ সালের ৩০ জুন এ হার পরিবর্তন করা হয়েছিল। ওই সময়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে দশমিক ৫০ শতাংশ কমিয়ে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়। অর্থাৎ প্রায় দুই বছর নীতি সুদের হার বাড়ানো হলো। এ সুদের হার বাড়ানোর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে যাবে। মূল্যস্ফীতির হার কমাতে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর জন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদের হার বাড়িয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে-তারা যাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা কম নেয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালে করোনাকালীন ব্যাংক খাত মোটামোটি গতানুগতিক ধারায় চলেছে। কিন্তু ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে বিভিন্ন সূচকে অভিনব পরিবর্তন শুরু হয়। ঋণপ্রবাহ বাড়তে থাকে অস্বাভাবিক গতিতে। এর বিপরীতে কমতে থাকে আমানতের প্রবৃদ্ধির হার। ব্যাংক থেকে ব্যাপক হারে টাকা তুলে মানুষ হাতে রাখতে শুরু করে। ঈদের সময় যেসব অর্থ ব্যাংক থেকে বের হয়, সেগুলো ফেরত আসছে কম। এসব মিলে ব্যাংকে টাকার প্রবাহ কমতে থাকে।

আরো পড়ুন