ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বাসায় ডেকে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে টাকা আদায় করেন তারা

প্রকাশিত: ২০:১৬, ২৩ আগস্ট ২০২২

বাসায় ডেকে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে টাকা আদায় করেন তারা

তানিয়া আক্তার ও মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া

ধনাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করে মেয়েদের ফেসবুক আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে পরিচয়। এরপর মন দেওয়া-নেওয়া। কিছুদিন পর একান্ত সময় কাটাতে প্রেমিকার বাসায় কিংবা হোটেলে যাওয়া কথা বলা হয়। সেখানেই ঘটে বিপত্তি। নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলে ও ভিডিও ধারণ করে টার্গেটকৃত ব্যক্তির কাছে দাবি করা হয় মোটা অংকের টাকা। সবশেষে মানসম্মান রক্ষায় তাদের চাহিদা পূরণ করেই মুক্তি মেলে প্রতারণার শিকার প্রেমিকদের।

এভাবেই দুজন নারী প্রথমে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে ফেসবুকে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সম্পর্কের ভিত্তিতে গত দুই বছরে বাসায় ডেকে এনে প্রায় ৫০ জন ধনাঢ্য ও করপোরেট ব্যক্তির ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা।

এমন একজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও দক্ষিণখানে অভিযান চালিয়ে দুই নারীসহ চক্রের সাতজনকে আটক করেছে র‌্যাব-১।

তারা হলেন- মো. আল মাহমুদ ওরফে মামুন, মো. আকরাম হোসেন ওরফে আকিব, মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া, তানিয়া আক্তার, মো. রুবেল, মো. মহসীন ও মো. ইমরান। অভিযানে তাদের কাছ থেকে অশ্লীল ছবি ও গোপন ভিডিও ধারণ কাজে ব্যবহৃত ১৪টি মোবাইল ফোন ও দুটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্রধরে ব্ল্যাকমেইলিং ও পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে চাঁদাবাজির অভিযোগে চক্রের মূলহোতা ও দুই নারীসহ সাতজনকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা এবং দক্ষিণখান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে একজন ভুক্তভোগী র‌্যাব-১ এ অভিযোগ করেন— গত ২২ জুলাই তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে মাস্তুরা আক্তার প্রিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। গত ১০ আগস্ট ভিকটিমকে মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া কৌশলে রাজধানীর একটি অভিজাত আবাসিক এলাকায় তার বান্ধবীর বাসায় নিয়ে যায়। রুমের ভেতরে প্রবেশ করার পর পূর্বপরিকল্পিতভাবে প্রিয়া ও তার সহযোগীরা ভিকটিমকে বিবস্ত্র করে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে।

পরে ক্যামেরায় ধারণকৃত এসব অশ্লীল ভিডিও দেখিয়ে ভুক্তভোগীর কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে এক লাখ টাকা ও ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা আদায় করে এ চক্র। লোকলজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগী ওই সময়ের ঘটনাটি একটি স্পর্শকাতর ও বিছিন্ন ঘটনা ভেবে কোথাও কোনো অভিযোগ না করে নীরব থাকেন। কিন্তু এ ঘটনার এক সপ্তাহ পরে আবারও আল মাহমুদ ওরফে মামুন ভুক্তভোগীর কাছে আরও ২ লাখ টাকা দাবি করেন। দাবি করা দুই লাখ টাকা না দিলে ধারণকৃত অশ্লীল ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়।

এমন সময় ভুক্তভোগীর নিরূপায় হয়ে র‌্যাব-১ এর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করে আইনগত সহায়তা চান। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর ভাটারার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও দক্ষিণখানে অভিযান চালিয়ে পর্নোগ্রাফি ও চাঁদাবাজ চক্রের মূলহোতাসহ সাতজনকে গ্রেফতার করে।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতাররা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। এ চক্রের মূলহোতা আল মাহমুদ ওরফে মামুন ও তার নারী সহযোগী তানিয়া আক্তার ও মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া। এ দুই নারী সদস্যের ছবি ও ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে নির্দিষ্ট কোনো আবাসিক ফ্ল্যাট বা হোটেলে আমন্ত্রণ জানাতো। ভুক্তভোগীরা ওই স্থানে গেলেই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে অন্যান্য সদস্যরা ভয়-ভীতি দেখিয়ে তার কাছে অর্থ আদায় করে।

এ কৌশল অবলম্বন করে চক্রটি গত ২ বছরে প্রায় ৫০ জনের বেশি ভুক্তভোগীর কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। গ্রেফতাররা রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় প্রতারণার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ ব্যয় করে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করে আসছিল।

গ্রেফতার দুই নারী সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার আল মাহমুদ ওরফে মামুনের স্ত্রী গ্রেফতার তানিয়া আক্তার। তারা দুজনে পরিকল্পিতভাবে এ কাজে জড়িত। এছাড়া গ্রেফতার মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত।

ফেসবুকে বন্ধুত্বের ডাকে সাড়া দিয়ে অপরিচিত কিংবা নির্জন স্থানে না যাওয়ার পরামর্শ দেন র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।

আরো পড়ুন