ঢাকা,  শুক্রবার  ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

মুনিয়ার বাসায় শেষ গিয়েছিল নুসরাতের তিন সহযোগী

প্রকাশিত: ০২:৩০, ৩ অক্টোবর ২০২১

মুনিয়ার বাসায় শেষ গিয়েছিল নুসরাতের তিন সহযোগী

মুনিয়ার মৃত্যু নিয়ে এখন তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এই তদন্ত করতে গিয়ে একের পর এক বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। হত্যা এবং ধর্ষণের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা এরই মধ্যে গুলশানের ওই ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ফুটেজ, রেজিস্টার বুক জব্দ করেছেন। সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, মুনিয়ার মৃত্যুর দুই ঘণ্টা আগে ওই ফ্ল্যাটে তিনজন ব্যক্তি প্রবেশ করেছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজে তাঁদের ছবি পাওয়া গেছে। কিন্তু তিনজন একসময় প্রবেশ করেনি। তাঁদের প্রথমজন প্রবেশের ৪৫ মিনিট পর দ্বিতীয়জন এবং তার ১৫ মিনিট পর তৃতীয়জন প্রবেশ করেছেন। এর আগে নুসরাতের সঙ্গে মুনিয়ার টেলিআলাপের রেকর্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সেখানে নুসরাত বলছেন, ‘ওদেরকে পাঠাচ্ছি, ওদেরকে বসার ব্যবস্থা কর। আমি আসছি।’
তাঁরা কারা : সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে পরবর্তী সময়ে নুসরাত যখন থানায় গেলেন সেই গুলশান থানার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যে তিনজন সেদিন মুনিয়ার মৃত্যুর আগে গুলশানের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন সেই তিনজনই আবার নুসরাতের সঙ্গে গাড়িতে করে গুলশান থানায় যান। গুলশান থানায় যখন নুসরাত মুনিয়ার মৃত্যু নিয়ে মামলা দায়ের করেন, সে সময় তাঁদেরকে নুসরাতের পাশে দেখা গেছে।
প্রশ্ন উঠেছে, নুসরাত কুমিল্লা থেকে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে আসার পরপরই এই তিনজন কোথা থেকে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে এলেন। আরো তদন্তে দেখা গেছে, নুসরাতের কাছে মুনিয়ার ফ্ল্যাটের একটি চাবির ডুপ্লিকেট চাবি থাকত। ওই চাবি তিনি এই তিনজন সহযোগীকে দিয়েছিলেন বলেও প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে। আবার যখন নুসরাত আদালতে নারাজি দরখাস্ত করেন তখনো ওই তিনজন ব্যক্তিকে নুসরাতের সঙ্গে কোর্টে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। এর পরেও যখন নুসরাত ৮ নম্বর নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন তখনো এই তিনজনকে পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই তিনজন নুসরাতের একান্ত ব্যক্তিগত সহযোগী এবং বিশ্বস্ত ব্যক্তি। তাঁরা কুমিল্লাতেও নুসরাতের জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে কাজ করেন। নুসরাতের পারিবারিক ঝামেলার জন্য তাঁকে কিছু সন্ত্রাসীগোষ্ঠী পালতে হতো বলে স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছে। বিশেষ করে তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধ সহিংসতা পর্যায়ে পৌঁছে এবং এ নিয়ে মামলা মোকদ্দমা আছে। এ কারণেই নুসরাত স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে ওঠাবসা শুরু করেন এবং তাদের নিয়মিত মাসোয়ারা দিতেন। একই সময় মুনিয়া যেন অবাধ্য না হয়ে যান এবং তাঁর নাগালের বাইরে না চলে যান এ জন্য মুনিয়াকে নজরদারির মধ্যে রাখার জন্য এরকম কয়েকজনকে ব্যবহার করা হতো। তাঁরা প্রত্যেকেই পেশাদার সন্ত্রাসী এবং তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। পুলিশ এখন এই তিনজনকে খুঁজছে। এই তিনজনকে অন্তত সাতটি জায়গায় নুসরাতের সঙ্গে দেখা গেছে এবং এই ভিডিওগুলো একটার পর একটা মিলিয়ে মুনিয়ার মৃত্যুর সঙ্গে এঁদের কোনো যোগসূত্র আছে কি না সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ মুনিয়া যদি সত্যি সত্যি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তাহলে সেই হত্যাকাণ্ডের সময় ওই ফ্ল্যাটে কাউকে থাকতে হবে।
এখন সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিনজন ব্যক্তি সে দিন ওই ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন। সেই তিনজনই আবার নুসরাতের সঙ্গে সার্বক্ষণিক ছায়ার মতো ঘোরাফেরা করছেন। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে এই মামলার তদন্তে একটি নাটকীয় মোড় নিয়েছে। বিভিন্ন মহল মনে করছে, নুসরাতের বিশ্বস্ত সহযোগী এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে পারলেই এই মামলার রহস্যজট অনেকখানি উপড়ে যাবে। তবে তদন্তে এটি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হয়েছে যে, মুনিয়ার মৃত্যুর দিন যাঁদেরকে আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে তাঁদের কেউই মুনিয়ার ফ্ল্যাটে যাননি। সিসিটিভি ফুটেজে তাঁদের ফ্ল্যাটে যাওয়ার কোনো প্রমাণ মেলেনি। বরং যে তিনজন রহস্যজনকভাবে ভুল ঠিকানায় ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন সেই তিনজনকে নিয়েই এখন তদন্ত ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন