ঢাকা,  মঙ্গলবার  ১৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

শত কোটি টাকা পাচার করেছেন রাসেল

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

শত কোটি টাকা পাচার করেছেন রাসেল

চটকদার সব পণ্যের অফার দিয়ে আলোচনায় আসা ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল প্রায় শত কোটি টাকা কয়েকটি দেশে পাচার করেছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে উঠে এসেছে। ওই টাকা তিনি পাচার করেছেন হুন্ডির মাধ্যমে। তার সঙ্গে মতিঝিল ব্যাংকপাড়ার দুইজন হুন্ডি ব্যবসায়ীর যোগসাজশ পাওয়া গেছে। তারা হলেন, সুমন  ও আব্দুল মান্নান। রাসেল ধরা পড়ার আগেই তারা গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাদের খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। টাকা পাচারের বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। রাসেল গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার ইভ্যালি থেকে প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের পাশাপাশি তাকে যারা সরাসরি পণ্য সরবরাহ করতেন তারাও পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
তিনটি বড় বড় প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির কাছে কমপক্ষে ২২৫ কোটি টাকা পাবে। ওই টাকা উদ্ধারে তারা এখন শঙ্কায় আছে। বিষয়টি নিয়ে তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হবেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও রাসেল ইভ্যালি প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ১১ বার বিদেশে গেছেন। বিদেশে যাওয়ার তার মূল উদ্দেশ্য ছিল যে, ইভ্যালিকে অন্য দেশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পরিচিত করানো। যাতে তারা সহজেই তাকে পণ্য সরবরাহ করে। বিদেশের একাধিক প্রকল্পে তার বিনিয়োগ রয়েছে। তার এ কাজে সহযোগিতা করেছে তার এক বন্ধু। তিনি চীন থেকে মোবাইল ফোন এনে থাকেন। তিনি দেশে এলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিদেশে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারের ক্ষেত্রে ওই বন্ধুর হাত রয়েছে বলে রাসেলকে রিমান্ডে নিয়ে জানতে পেরেছে পুলিশ।  
গত বৃহস্পতিবার বিকালে মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে রাসেল ও নাসরিনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গুলশান থানায় ইভ্যালির এক গ্রাহকের করা মামলার প্রেক্ষিতে তাকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করে। পরে গুলশান থানা পুলিশ তাকে আদালতে প্রেরণ করে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন। পরে আদালত তাদের তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তারা এখন  গুলশান থানায় পুলিশের রিমান্ডে আছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে র‌্যাব’র আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন জানান, ‘রাসেলকে র‌্যাব প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তার তথ্যগুলো তদন্তাধীন।’
পুলিশ জানায়, কাওরানবাজারে একটি প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মরত থাকা অবস্থায় রাসেল ই-কমার্স বিজনেস করার পরিকল্পনা করেন। এতে যুক্ত করেন তার স্ত্রী নাসরিনকে। মূলত তার এ কোম্পানিকে পারিবারিক বিজনেসে রূপান্তরিত করার জন্যই তিনি তার স্ত্রীকে যুক্ত করেন।
সূত্র জানায়, ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশে টাকা পাঠালে তিনি বিতর্কের মধ্যে পড়তে পারেন এজন্য তিনি হুন্ডিকে বেছে নেন। হুন্ডির মাধ্যমে নির্বিঘ্নে তিনি গ্রাহকদের টাকা এবং ইভ্যালি থেকে আয়কৃত টাকা দেশের বাইরে নিয়ে গেছেন।
মামলার তদন্তকারীদের আশঙ্কা যে, ওই টাকা দেশে আনা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। এতে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন যারা ইভ্যালিতে টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
সূত্র জানায়, রাসেল প্রথম থেকেই সরাসরি  কোম্পানি  থেকে পণ্য কিনে গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করা শুরু করেছিলেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এটিকে ‘ডাইরেক্ট সেল’ হিসাবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু, এতে তিনি পণ্য থেকে কীভাবে লাভ করতেন তার কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
সূত্র জানায়, যেসব গ্রাহকেরা তার কাছে কোনো পণ্য পেতেন না তারা রাসেলের ইভ্যালির অফিসে ধরনা দিতেন। তার  লোকজন  কৌশলে ওইসব গ্রাহকদের ই- মেইল নিয়ে ফেসবুকে ইভ্যালির অন্য গ্রাহকদের পণ্য ডেলিভারির ছবি সেন্ড করতেন। পরে  যেসব গ্রাহক পণ্য পায়নি তারা আশায় ছিলেন যে, তারা হয়তো পণ্য ডেলিভারি পাবেন। এভাবে রাসেল প্রতারণা করে ইভ্যালির ব্যবসাকে আরও উন্নতির শিখরে নিয়ে গেছেন। এছাড়াও  টেলিভিশন, পত্রিকা এবং গুগলসহ ইউটিউবে গ্রাহক টানার জন্য তিনি বিজ্ঞাপনে মোটা অংকের টাকা বরাদ্দ রাখতেন। সূত্র জানায়, রাসেল ও তার স্ত্রী নাসরিনকে গ্রেপ্তার করার পর র‌্যাব তাদের দু’জনকে  উত্তরার সদর দপ্তরে নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে। র‌্যাব’র জিজ্ঞাসাবাদে অনেক কিছুই তিনি অকপটে উত্তর দিলেও কিছু তথ্য গোপন করেছেন।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন