ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

মায়ের জন্য পাত্র চেয়ে ছেলের বিজ্ঞপ্তি

প্রকাশিত: ১৬:২০, ১ আগস্ট ২০২২

আপডেট: ১৭:৪১, ১ আগস্ট ২০২২

মায়ের জন্য পাত্র চেয়ে ছেলের বিজ্ঞপ্তি

মায়ের সঙ্গে ছেলেছবি: সংগৃহীত

বাবা মারা গেছেন বছর দুয়েক হয়। বাবার মৃত্যুর পর মা অনেকটা একা হয়ে পড়েছেন। দুই ছেলে মাকে যথেষ্ট সময় দিতে পারেন না। তবে তাঁরা মাকে বাকিটা জীবন ভালো রাখতে চান। তাই মায়ের সম্মতি নিয়ে তাঁর জন্য পাত্র খুঁজছেন তাঁরা। এ জন্য ফেসবুক পেজে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।

মায়ের জন্য পাত্র চেয়ে বিজ্ঞপ্তিটি পোস্ট করেছেন ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা মোহাম্মদ অপূর্ব। তিনি ‘জি অ্যান্ড টেক’ নামের একটি অনলাইন পেজের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন। তাঁর বড় ভাই মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। তিনিও ব্যবসা করেন।

ইমরান-অপূর্বের বাবা ঈয়াদ আলী। তিনি দুই বছর আগে মারা গেছেন। দীর্ঘদিন ক্যানসারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। মা ডলি আক্তার। তাঁর বয়স এখন ৪২ বছর। তিনি পড়াশোনা করেছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত।

গত শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে জীবনসঙ্গী খুঁজে দেওয়ার ‘বিসিসিবি মেট্রিমনিয়াল: হেভেনলি ম্যাচ’ নামের ফেসবুক গ্রুপে মায়ের জন্য পাত্র চেয়ে বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করেন অপূর্ব।

মা ডলি আক্তারের জন্য পাত্র চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন ছেলে মোহাম্মদ অপূর্ব

আম্মুর জন্য পাত্র খুঁজছি
বিজ্ঞপ্তিতে অপূর্ব লিখেছেন, বাবা মারা গেছেন। তাই আম্মুর জন্য পাত্র খুঁজছি।

মায়ের জন্য কেমন পাত্র চান, তা-ও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছেন ছেলে। মায়ের সঙ্গে মানানসই পাত্র চান। পাত্র ঢাকার আশপাশের হলে ভালো হয়। শিক্ষাগত যোগ্যতা কম হলে সমস্যা নেই।

পাত্রের পেশা চাকরি বা ব্যবসা—যেকোনোটা হতে পারে। ধর্মকর্ম করার পাশাপাশি পাত্রকে সাদামাটা হতে হবে। যিনি মায়ের জীবনের বাকি চলার পথের সঙ্গী হতে পারবেন। পাত্রের বয়স ৪২ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে হলে ভালো হয়।

বিজ্ঞপ্তি শেষ করা হয়েছে এভাবে, পারিবারিকভাবেই মায়ের বিয়ে দিতে ইচ্ছুক। বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে মা-ছেলে ও মায়ের একার ছবি যুক্ত করা হয়েছে।

মায়ের জীবন সুন্দর হোক
গতকাল রোববার দুপুরে অপূর্বের সঙ্গে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। ছেলে জানান, তাঁদের দুই ভাইয়ের সঙ্গে মায়ের আগে থেকেই বন্ধুর মতো সম্পর্ক। বাবা মারা যাওয়ার আগে থেকেই তাঁরা সবাই বড় ভাই ইমরানের করা বাড়িতে থাকেন। বড় ভাই বিয়ে করেছেন। তাঁর পাঁচ বছর বয়সী এক সন্তান আছে।

অপূর্ব বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর মা তাঁর অনেক কথাই আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন না। অনেক কথা বলতে গেলে তিনি একটু দ্বিধায় পড়ে যান। আমরা বড় হয়েছি। আমাদের ব্যস্ততা আছে। এ কারণে আমরা মাকে যথেষ্ট সময় দিতে পারি না। বড় ভাইয়ের সংসার আছে। আমিও ভবিষ্যতে বিয়ে করব। তখন মা আরও একা হয়ে যাবেন। তাই আমরা সবাই চাচ্ছি, মায়ের একটা সুন্দর জীবন হোক। তাঁর একজন ভালো জীবনসঙ্গী দরকার।’

অপূর্ব জানান, তিনি এ বিষয়ে তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর সম্মতি পান। বড় ভাইও সম্মতি দেন। মা ও বড় ভাইয়ের অনুমতি নিয়েই তিনি গত শনিবার রাতে ফেসবুক গ্রুপে বিজ্ঞপ্তিটি দেন।

অপূর্ব বলেন, ‘আমি নিজে উদ্যোগী হয়ে বিষয়টিকে এত দূর নিয়ে এসেছি। এখন আমাদের একটাই চাওয়া—মায়ের জন্য একজন ভালো জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া।’

জীবনে সঙ্গী দরকার
মুঠোফোনে যখন অপূর্বের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন তাঁর পাশেই ছিলেন ডলি আক্তার। তাঁর সঙ্গেও মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমার এক ছেলে বিয়ে করেছে। আরেক ছেলে এখনো বিয়ে করেনি। জীবনে চলতে গেলে একজন সঙ্গীর প্রয়োজন হয়। আমার স্বামী মারা গেছেন। এখন ছেলেরা আমার কথা ভাবছে। আমি সম্মতি দিয়েছি।’

ডলি আক্তার বলেন, তিনি ভালো মনের একজন জীবনসঙ্গী আশা করেন। যিনি তাঁর দুই ছেলে, ছেলেবউসহ পরিবারের সবাইকে আপন করে নিতে পারবেন। 

ডলি আক্তার এ কথা বলতেই পাশ থেকে ছেলে অপূর্ব বলে ওঠেন, ‘মায়ের কষ্ট আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না। যদি দেখি নতুন জীবনসঙ্গীর সঙ্গে মা ভালো নেই, তাহলে আমরা তাঁকে আমাদের কাছে নিয়ে আসব।’

পরিবারের অন্য সদস্যরা এই উদ্যোগকে কীভাবে নিচ্ছেন, জানতে চাইলে অপূর্ব বলেন, ‘মায়ের দিকের আত্মীয়-স্বজনেরা রাজি। তাঁরা চান, মায়ের আলাদা একটা জীবন হোক। বাবার দিকের আত্মীয়-স্বজনেরাও দ্বিমত করেননি। তা ছাড়া মা যেহেতু মত দিয়েছেন, তাই আর তো কোনো কথা থাকে না।’ 

অপূর্বের ভাষ্য, সমাজে পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তন সবাইকে মানতে হবে।

নেট দুনিয়ায় সাধুবাদ
অপূর্বের বিজ্ঞপ্তিটি ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছে। বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার মানুষ লাইকসহ অন্যান্য প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। মন্তব্য করেছেন প্রায় ৫০০ ব্যবহারকারী।

অপূর্ব বললেন, ‘বিজ্ঞপ্তিতে আসা মন্তব্য পড়ে বেশ ভালো লাগছে। অধিকাংশ মন্তব্যকারী আমাদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। মা যাতে একজন উপযুক্ত জীবনসঙ্গী পান, সে জন্য তাঁকে অনেকেই অগ্রিম শুভকামনা জানিয়েছেন।’