ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

ট্রেন দুর্ঘটনা: বাবার সঙ্গে শেষ কথা ‘আল্লাহ হাফেজ’

প্রকাশিত: ১৩:১৩, ৩০ জুলাই ২০২২

ট্রেন দুর্ঘটনা: বাবার সঙ্গে শেষ কথা ‘আল্লাহ হাফেজ’

নিহত সজীবের বাবা ও ভাই

সজীবের মৃত্যুর খবর যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য শোকে পাথর করে দিয়েছে বাবা হামীদকে। ক্ষণে ক্ষণে ছেলের জন্য আহাজারি করে মূর্ছা যাচ্ছিলেন এ বাবা। ছেলেকে ‘আল্লাহ হাফেজ’ বলে বিদায় দিয়েছিলেন তিনি। ছেলের সঙ্গে এ কথাই যে শেষ কথা হবে, তা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি তিনি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত জিয়াউল হক সজীবের বাবা মো. হামীদ বলেন, ‘নামাজ শেষে বাসায় গিয়ে দুপুরের খাবার খেতে বসেছি; ওই সময় পাশের বাড়ির ভাবি এসে মিরসরাইয়ে এক্সিডেন্টের কথা বলে। তাড়াতাড়ি ছেলেকে কল দিলাম। দেখি মোবাইল বন্ধ। খাবার রেখে ছুটে গেলাম। মাঝপথে একটা অ্যাম্বুলেন্সে করে এখানে (চমেক হাসপাতাল) চলে এলাম। আমার ছেলেকে তো পাইনি। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে পড়িয়েছি। সামান্য মুদি দোকানের কর্মচারী আমি।’

ভাইয়ের শোকে মূর্ছা যাচ্ছিলেন সজীবের ছোট ভাই তৌসিব। আহাজারি করে বলছেন, ‘ও আল্লাহ আমাকে নিলে না কেন। আমার ভাইকে ফিরাই দাও। আমার ভাইকে এনে দাও তোমরা। আমার জানের ভাইটা কই। ভাইরে, তুই কই?’

বাবা হামীদ আর ছোট ভাই তৌসিবের কান্নায় চোখ জলে ছলছল করে উপস্থিত সবার। বন্ধু, সহপাঠী আর এলাকাবাসীর কারণে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের জায়গায় তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই।

শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুরে ঝরনায় ঘুরতে গিয়ে ঝরে গেল ১১ প্রাণ। বয়সে সবাই তরুণ। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, গেটম্যানের ভুলেই ঝরেছে এত প্রাণ।

দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া সেই মাইক্রোবাসের ১৮ যাত্রীর মধ্যে ১১ যাত্রীই ঘটনাস্থলে নিহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সাতজন। এর মধ্যে ছয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং একজন আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন। আশঙ্কামুক্ত মো. ইমন নিজেই মাইক্রোবাসে ১৮ জনের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। হতাহত সবাই ‘আর অ্যান্ড জে’ নামের একটি কোচিং সেন্টারের ছাত্র ও শিক্ষক। নিহতদের মধ্যে চারজন শিক্ষক, ছয়জন ছাত্র ও মাইক্রোবাসের চালক আছেন।

স্নাতকপড়ুয়া চার বন্ধু মিলে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ধারদেনা করে দুমাস আগে হাটহাজারীতে আর অ্যান্ড জে নামের একটি কোচিং সেন্টারের যাত্রা শুরু করেন। যাত্রার পর সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কোচিং সেন্টারটির শিক্ষকরা এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নেন ঘুরতে যাওয়ার। কিন্তু তাদের আর বাড়ি ফেরা হলো না।

তাদেরই একজন মোস্তফা মাসুদ রাকিব। রাকিবের চাচা সারওয়ার বলেন, ‘আমার ভাইয়ের ছেলেটা আর ফিরবে না। ওর বাবা মা কেমন করে বাঁচবে। আমি কি করে ওদের সান্ত্বনা দেব। কার ভুলে আমার ভাইয়ের ছেলেটা মরে গেল?’