ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

সুনামগঞ্জে ব্যতিক্রমী রায়, ‘লাগাতে হবে গাছ-শুনতে হবে বাবা-মায়ের কথা’

প্রকাশিত: ১৮:২৯, ২০ জুলাই ২০২২

সুনামগঞ্জে ব্যতিক্রমী রায়, ‘লাগাতে হবে গাছ-শুনতে হবে বাবা-মায়ের কথা’

ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জে আবারো ব্যতিক্রমী রায়ে ৬৫ শিশু ও ২৫ দম্পতিকে পরিবারের মাঝে ফিরিয়ে দিয়েছে আদালত।

বুধবার (২০ জুলাই) দুপুর ১২টায় শিশু আইনে ও ১টার দিকে নারী নির্যাতন দমন আইনে এ রায় দেন সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন।

এ সময় শিশুদের আদালতের পক্ষ থেকে জাতীয় পতাকা, ফুল, মুক্তিযুদ্ধের বই, ডায়েরি ও কলম উপহার দেওয়া হয়।

প্রবেশনের মাধ্যমে ৫২টি মামলার ৬৫ শিশু আসামিকে শিশু কারাগারে না পাঠিয়ে ৬টি শর্তে মুক্ত করা হয়। শর্তগুলো হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধকে জানা, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করা, প্রতিদিন দুটি ভালো কাজ করা, কমপক্ষে ২০টি গাছ রোপণ, নিয়মিত ধর্ম পালন ও বাবা-মায়ের কথা শোনা, মাদক ও অন্যান্য অপরাধ থেকে বিরত থাকা।

শর্তগুলো প্রতিপালন তদারকি করবেন জেলা প্রবেশন অফিসার শাহ মো. শফিউর রহমান। প্রবেশন অফিসারের পরবর্তী প্রতিবেদন সাপেক্ষে তাদের চূড়ান্ত মুক্তি ও অথবা আবার আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিক শিশু মামলা ছাড়াও একই বিচারক আদালত স্বামীর ওপর করা ২৫টি মামলা নিষ্পত্তি করে তাদের পরিবারকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, যৌতুকসহ নানা কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে সংসার থেকে বিতাড়িত ২৫ নারী তাদের নিজ নিজ স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিলেন। বিচারক বক্তব্য শুনে সন্তান ও তাদের মঙ্গলের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্প্রীতি ও মিলনের শর্তে ২৫ যুগলকে পারিবারিকভাবে এক করে দেন।

এসব বিষয় নিশ্চিত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নান্টু রায় বলেন, সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক কিছু শর্ত আরোপের মাধ্যমে ৫২টি শিশু মামলা ও ২৫টি নারী ও শিশু মামলা নিষ্পত্তি করে তাদের সংসারে ফেরত পাঠিয়েছেন। এতে তারা সবাই অনিশ্চিত জীবন থেকে রক্ষা পেল। 

দিরাই উপজেলার তামিম (১৬) বলে, ছোটখাটো একটা অপরাধে জড়িয়ে জীবন শেষ হওয়া থেকে বাঁচিয়ে এনেছেন এই বিচারক। কারাগারে না দিয়ে আমাদের বাড়িতে থাকার সুযোগ দিয়েছেন। আমরা এ জন্য আনন্দিত। আমরা ভুল বুঝতে পেরেছি।

শান্তিগঞ্জ উপজেলার গাগলী গ্রামের ইয়ামিম (১৭) বলে, মারামারির এক মামলায় জড়িত হয়ে যাই। যে কারণে বারবার আদালতে আসতে হয়েছে। আজ এই কষ্ট থেকে মুক্তি পেলাম। আমি আর খারাপ কাজ করব না।

শিশু ও মানব পাচার ট্রাইবুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর হাসান মাহমুদ সাদি জানান, সুনামগঞ্জের শিশু ও নারী আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন বিশ্বের শিশুদের জন্য, সুনামগঞ্জের শিশুদের জন্য একটি অভাবনীয় রায় দিয়েছেন। ৫২টি মামলায় ৬৫ শিশুকে মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। হাতে ডায়েরি, বই দিয়ে ছয়টি শর্ত দিয়েছেন। মা-বাবার কাছে থেকে সেই ছয়টি শর্ত এক বছর প্রতিপালন করবে।

জেলা প্রবেশন অফিসার শাহ মো. শফিউর রহমান বলেন, আদালত আজ ৫২টি মামলায় ৬৫টি শিশুকে সুযোগ দিয়েছে। প্রবেশন অফিসার হিসেবে আমি সবার তদারকি করব। যারা শর্ত মানবে, তাদের আদালতের মাধ্যমে চূড়ান্ত মুক্তি দেওয়া হবে। যারা করবে না, তাদের আবারও আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে।