ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৮ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

‘ভালো চিকিৎসার’ কথা বলে মাকে সড়কে ফেলে গেল ছেলে

প্রকাশিত: ১২:২৬, ২০ জুলাই ২০২২

‘ভালো চিকিৎসার’ কথা বলে মাকে সড়কে ফেলে গেল ছেলে

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাজেদা বেগম

৭০ পেরিয়েছে মাজেদা বেগমের বয়স। এখন আর আগের মতো তেমন চলাফেরাও করতে পারেন না। বয়সের ভারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন কয়েক মাস আগে। কিন্তু ভালো চিকিৎসার কথা বলে মাকে ঘোরাতে থাকেন ছেলে। এভাবে দুই মাস পার হলেও মায়ের কপালে জোটেনি চিকিৎসা। উল্টো সড়কের পাশে মাকে ফেলে রেখে চলে যান ছেলে ও তার স্ত্রী।

ঘটনাটি বরিশালের গৌরনদীর। সম্প্রতি বৃদ্ধা মাজেদাকে উপজেলার বাটাজোর বাসস্ট্যান্ডের পাশে ফেলে রাখা হয়। বর্তমানে গৌরনদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপিন চন্দ্র বিশ্বাসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা চলছে তার।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. তৌকির আহম্মেদ বলেন, একদিনে মাজেদার স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে। তবে শরীরে জ্বর রয়েছে। এছাড়া তিনি অনেক বেশি দুর্বল। আমরা সার্বক্ষণিক তার খোঁজখবর নিচ্ছি। এমনকি তার পাশে একজন নার্স সবসময় সেবা শুশ্রুষা করছেন।

তিনি বলেন, মাকে এভাবে ফেলে রেখে যাওয়াটা অন্যায়। আমার জীবনে এ ঘটনার মুখোমুখি হতে হবে তা কল্পনাও করিনি।

বাটাজোর বাসস্ট্যান্ড থেকে উদ্ধার করে বৃদ্ধা মাজেদাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন যুবক শিপন। তিনি পার্শ্ববর্তী আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসের অফিস সহকারী।

শিপন বলেন, সোমবার রাত ১টার দিকে বাটাজোর এলাকায় একজন বৃদ্ধা মাকে সন্তান ফেলে গেছেন বলে ফেসবুকে জানতে পারি। খবরটি পেয়ে আর স্থির থাকতে পারিনি। কাছেই আমি থাকি। আমার এক বন্ধুকে নিয়ে এসে একটি মোবাইল কোম্পানির টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মীর হেফাজতে থাকা বৃদ্ধাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে গৌরনদী হাসপাতালে ভর্তি করি। তখন তিনি প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে তার জ্ঞান ফেরে। বিষয়টি গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের জানানো হয়। তারা তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে যোগাযোগ করে সর্বাত্মক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলেছেন।

মোবাইল টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী করিম হাওলাদার বলেন, সোমবার রাতে ওই বৃদ্ধাকে অজ্ঞান অবস্থায় স্থানীয়রা পান। তারা আমার থাকার স্থানে তাকে রেখে যান। এ সময়ে কেউ হয়তো ছবি তুলে ফেসবুকে দেন। রাত ১টার পর আগৈলঝাড়া ইউএনও অফিসের লোক এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাজেদা বেগম জানান, পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলার বাসিন্দা চাঁন মিয়ার স্ত্রী তিনি। তার ছেলে শাহ আলম ও তার স্ত্রী তাকে ‘ভালো চিকিৎসার’ কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে বের হন। বাসে যাচ্ছিলেন। পথে বাটাজোর নামেন তারা। এরপর আর ছেলেকে খুঁজে পাননি তিনি।

তিনি বলেন, ‘মোর গেদু এইরহমের নিষ্ঠুর হইবে চিন্তাও হরি (করি) নাই। কী কইছে আর কী হরলো?’

ছেলে কী করেন- এমন প্রশ্নে তিনি চুপ হয়ে যান। হাসপাতালের দায়িত্বরতরা বলছেন, মাজেদা বেগম এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না সন্তান তাকে সড়কে ফেলে রেখে যাবেন। তিনি মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত।

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বৃদ্ধা মা যতটুকু বলতে পারছেন সে অনুসারে তার বাড়ির ঠিকানা শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া ছবি দিয়েও তার স্বজনদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। চিকিৎসার কথা বলে এভাবে ফেলে যাওয়া বিষয়টি অত্যন্ত গর্হিত কাজ। যে বা যারা এমন কাজ করেছেন তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।