ঢাকা,  শুক্রবার  ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ ‌মাউন্টেন ব্রিজ, কুঞ্জছায়া

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ৪ মে ২০২২

পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ ‌মাউন্টেন ব্রিজ, কুঞ্জছায়া

খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের কাছে এতদিন দর্শনীয় স্থান বলতে উল্লেখযোগ্য ছিল আলুটিলা গুহা আর রিছাং ঝর্ণা। বিশাল সুউচ্চ আলুটিলার সৌন্দর্য ছাড়াও বর্তমানে এখানে একটি পরিকল্পিত 'পর্যটন কেন্দ্র' গড়ে তোলা হয়েছে। আলুটিলা হয়ে উঠেছে মনোরম এক পর্যটন স্পট। প্রবেশ পথে সুদৃশ্য তোরণ, দুই পাহাড়ের সংযোগ রেখা টেনে তৈরি করা হয়েছে রঙিন মাউন্টেন ব্রিজ, নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য ফুল, তৃণ, লতা আর পাতাবাহারের 'কুঞ্জছায়া', বিনোদনের জন্য 'অ্যাম্ফি থিয়েটার ও 'সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার'। 

পর্যটন মন্ত্রণালয় ও খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের যৌথ অর্থায়নে 'আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র' তৈরি করা হয়েছে। সাজেক ফেরত বা সাজেকমুখী পর্যটকদের কাছে আলুটিলা এখন নান্দনিক নিসর্গেও শীর্ষে। 

সাজেকের 'লুসাই ইকো ভিলেজ' এর পরিচালক ইলোরা আজমেরী দোলা বলেন, খাগড়াছড়ি শহরকে পাখির চোখে এক পলক দেখার জন্য আলুটিলাই সঠিক স্থান। অন্ধকার অথবা জোছনা রাতে শহরের সৌন্দর্য দেখার অনুভূতি সত্যিই দার্জিলিঙের মতো। কিন্তু আলুটিলায় আগে সেই আনন্দ উপভোগের পরিবেশ ছিল না। এখনকার আলুটিলা আর দুই বছর আগের আলুটিলা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করা যাবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলুটিলা পর্যটন এলাকায় নির্মাণাধীন দুই কোটি টাকার চারতলা রেস্ট হাউস 'খুমপুই'। এর নির্মাণ শেষ হলে পর্যটকদের আর রাতযাপনের জন্য শহরে ফেরার চিন্তা থাকবে না। প্রায় ৪২ লাখ টাকায় তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। পাহাড়ের জাতি ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরার জন্য অ্যাম্ফি থিয়েটার। যেখানে এক সঙ্গে গ্যালারিতে পাঁচশ' দর্শনার্থী অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন। 

জেলায় এই প্রথম নির্মিত অ্যাম্ফি থিয়েটার প্রসঙ্গে ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) জিতেন চাকমা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশেই পাহাড় ও নৃ-জাতির সংস্কৃতিকে পুঁজি করেই বিকশিত হয়েছে। 

আলুটিলার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আলুটিলার দুই পাহাড়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত 'মাউন্টেন ব্রিজ'টি ইতিমধ্যেই দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জেলার বাইরের পর্যটকদের পাশাপাশি জেলা শহর এবং বিভিন্ন উপজেলার সব বয়সী নারী-পুরুষদের কাছেও ঝুলন্ত প্রকৃতির সেতুটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার বোরহান উদ্দিন আহম্মেদ বলেন,আলুটিলাকে নতুন রুপ দিয়েছে 'কুঞ্জছায়া'। করোনার শিথিল পরিবেশে যে ক'বার আলুটিলা গেছি মনে হয়েছে 'কুঞ্জছায়া'র আলো-ছায়া আর মেঘ বৃষ্টির দারুণ এক লুকোচুরি।

চট্টগ্রামের সুখ্যাত শিল্পী মঈনুল আলম মনে করেন, সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতাকে ধারণ করে ঋতুভিত্তিক গান-কবিতার আসর, উন্মুক্ত আর্ট ক্যাম্প, ঘুড়ি উড়ানো এবং ভোজন বিলাসের মতো উপভোগ্য আয়োজন করা গেলে এই আলুটিলাই একদিন খাগড়াছড়ি জেলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।

আলুটিলা ঘিরে 'মাউন্টেন টুরিজমের (পর্বত পর্যটন)' সম্ভাবনা প্রসঙ্গে বলেন, শহর থেকে দূরে এমন নিরিবিলি পাহাড় বাংলাদেশে হাতে গোনা কয়েকটি শহরে রয়েছে। আর যদি সে পাহাড়ের সীমানার ভেতরই রেস্ট হাউজ, ওয়াচ টাওয়ার, মাউন্টেন ব্রিজ, রেস্টুরেন্ট আর অ্যাম্ফি থিয়েটার থাকে, তা হলো তো আর কথাই নেই।

খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতি'র সাধারণ সম্পাদক এস. অনন্ত ত্রিপুরা বলেন, আগে খাগড়াছড়িতে পর্যটকরা যদি রাত্রিযাপন করতেই হতো, তাহলে বিকেল-সন্ধ্যা বেলায় শুধু বাজারেই ঘুরপাক খেতেন। সময় কাটানোর মতো কোনো নির্ভরযোগ্য জায়গা ছিল না। বর্তমানে সাজেকমুখী পর্যটকরা অন্তত এক বেলা বাড়তি সময় কাটাচ্ছেন খাগড়াছড়িতে। 

খাগড়াছড়ির পার্বত্য পিকআপ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কিশলয় তালকুদার জানান, করোনার বিধিনিষেধ শিথিল হবার পর খাগড়াছড়ি হয়ে সাজেকগামী পর্যটকের আগমন বেড়েছে। তবে বেশিরভাগ পর্যটকই খাগড়াছড়িতে রাত্রিযাপন কিংবা বেড়াতে আগ্রহী হতেন না। কিন্তু গত ছয় মাস ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, পর্যটকরা আলুটিলায় গিয়ে গুহা ও রিছাং ঝরনা দেখার পর আরও কিছুটা সময় অবস্থান করছেন। 

খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের এই পর্যটন কেন্দ্রটি জেলা প্রশাসনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। এটি অনেকটা খাগড়াছড়ি সদর ও মাটিরাঙা উপজেলার সীমান্ত লাগোয়া। এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হেমেন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রটি ত্রিপুরা জনগোষ্ঠি অধ্যুষিত এলাকায়। আগে সূর্য না ডুবতেই অন্ধকারের ভয়ে পর্যটন গেট বন্ধ হয়ে যেত। এখন আলো ঝলমল আলুটিলায় আমার ইউনিয়নের অনেক নারী-পুরুষ ক্ষুদ্র ব্যবসা করেই জীবিকা নির্বাহ করছে।

মাউন্টেন ব্রিজ

পুলিশ সুপার মো. আব্দুল আজিজ জানান, আলুটিলা যেহেতু শহর থেকে একটু দূরে তাই ওখানে একটি স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। এছাড়া আশপাশের এলাকায় কমিউনিটি পুলিশের পাশাপাশি টুরিস্ট পুলিশের সেবাও নিশ্চিত করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ির ডিসি প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আলুটিলার পর্যটন গুরুত্বকে ফুটিয়ে তুলতে একটি বিজ্ঞানসম্মত মাস্টারপ্ল্যান করে সে অনুযায়ী কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় স্থাপত্যশৈলী, পাহাড় ও মৃত্তিকা সংরক্ষণের দিকেও সংবেদনশীলতা বজায় রাখা হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ কোটির টাকার প্রকল্প শেষের পথে।

গাজীপুর কথা