ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ১৮ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

ঝাড়ু হাতে ব্যতিক্রমী হেলাল উদ্দিন

প্রকাশিত: ১৩:৫১, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ঝাড়ু হাতে ব্যতিক্রমী হেলাল উদ্দিন

যে কাজ অন্যরা করতে লজ্জা পায়। টাকা অথবা পারিশ্রমিকের বিনিময় ছাড়া কেউ করবে না। এমনই কাজ বেছে নিয়েছেন হেলাল উদ্দিন। গত প্রায় ২৬ বছর তিনি এ কাজ করে যাচ্ছেন বিনা টাকায়।

হেলাল উদ্দীনের বক্তব্য-‘চারিপাশে ময়লা নাই, এমন একটি বাজার চাই’।

হেলাল উদ্দীনের বয়স নেহাতই কম না। ৭২ ছুইঁ-ছুঁই। ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের মহেশ্বরচাঁদা গ্রামের বাসিন্দা তিনি। কৃষিকাজ করে সংসার চালান তিনি। স্ত্রী মাহিরন নেছা আর চার মেয়ে, তিন ছেলে নিয়ে তার সংসার।

বাজার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নিয়ে কথা বলেন প্রবীণ হেলাল উদ্দীন। তিনি জানান, ১৯৯৬ সালে নিয়ামতপুর ইউপির সদস্য হন। তখন থেকেই শুরু করেন বাজার পরিষ্কার করার কাজ। ভোর হলেই হাতে ঝাটা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। ফজরের নামাজ আদায় করেন গ্রামেরই মসজিদ থেকে। তারপর লেগে পড়েন বাজার ঝাড়ু দিতে।

 

হেলাল উদ্দীনের বক্তব্য-‘চারিপাশে ময়লা নাই, এমন একটি বাজার চাই’।

হেলাল উদ্দীনের বক্তব্য-‘চারিপাশে ময়লা নাই, এমন একটি বাজার চাই’।

সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, মহেশ্বরচাঁদা বাজারটি খুব একটা বড় না। তবে চকচক করছে বাজারের চারিদিক। একটি বটবৃক্ষকে ঘিরে বাজারটি অবস্থিত। বাজারের চারপাশ দিয়ে ছোট বড় মিলিয়ে ১৫-১৮টি দোকান আছে। দৈনিক প্রায় কয়েকশো মানুষ আসে বাজারে।

গ্রামের মানুষ হেলাল চাচা বলেই ডাকে তাকে। তারা জানান, বাজার দেখলেই তারা বুঝতে পারেন হেলাল উদ্দীন সুস্থ আছেন বা এলাকায় আছেন। বাজারে ময়লা পড়ে থাকলেই তারা বুঝে নেন, হেলাল চাচা অসুস্থ বা গ্রামে নেই। সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে তিনি এই কাজ করে যাচ্ছেন বলেও এলাকাবাসী জানান।

হেলাল উদ্দীন বলেন, অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে তার বেড়ে ওঠা। কৃষক বাবার সন্তান তিনি। ছিলেন ৩ ভাই ও ১ বোন। ২ ভাই বর্তমানে মারা গেছেন। তার বাবার মাত্র ৭০ শতক জমি ছিল। তাই দ্বিতিয় শ্রেণির বেশি পড়ালেখা হয়ে ওঠেনি। বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ করে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে।

 

হেলাল উদ্দীনের বক্তব্য-‘চারিপাশে ময়লা নাই, এমন একটি বাজার চাই’।

মহেশ্বরচাঁদা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল সালেক জানান, হেলাল উদ্দীন ব্যতিক্রমী এক মানুষ। তার মতো পথ দেখানো মানুষ এ সমাজে পাওয়া খুবই দুষ্কর।

মহেশ্বরচাঁদা বাজারের দোকানদার আবদুল আজিজ জানান, প্রত্যেকে সকালে একটা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন বাজার পান শুধুমাত্র হেলাল উদ্দীনের জন্য। তিনি টাকা-পয়সা নেয়া তো দূরের কথা, কখনই কোনো অপ্রাপ্তির কথা আমাদের বলেননি।

হেলাল উদ্দীন জানান, মানুষের সেবা করাই তার মূল উদ্দেশ্য। তিনি এর বিনিময়ে কিছুই চান না। সবাই ভালো থাকুক এই তার প্রত্যাশা।

গাজীপুর কথা