ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বন্যহাতির অত্যাচার বন্ধে অভয়ারণ্য সৃষ্টির পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ১৬:০৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

বন্যহাতির অত্যাচার বন্ধে অভয়ারণ্য সৃষ্টির পরিকল্পনা

বন্যহাতির অব্যাহত তাণ্ডবে সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড়ের কমপক্ষে ৩৮টি গ্রামে হাতি আতঙ্ক বিরাজ করছে। হাতির আক্রমণে জানমাল বাঁচাতে প্রায় ৮ হাজার পাহাড়ি এলাকার মানুষ আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। গারো পাহাড়ে কিছুতেই যেন এ আতঙ্ক কাটছে না। এসব অঞ্চলের কোনো না কোনো স্থানে প্রায় প্রতি রাতেই বন্যহাতি তাণ্ডব চালায়। 

দীর্ঘদিনের হাতিযুদ্ধে মানুষ মারা যাচ্ছে ও পঙ্গু হচ্ছে। বিগত ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত বন্যহাতির আক্রমণে মানুষ মারা গেছে ২৩ জন ও হাতি মারা গেছে ২৭টি। তাই জীববৈচিত্র রক্ষা ও জানমাল বাঁচাতে অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে স্থানীয়রা জানান। 

ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, প্রায় দুই যুগ ধরে গারো পাহাড়ে শতাধিক বন্যহাতির পাল কয়েকটি উপদলে বিভক্ত হয়ে লোকালয়ে হামলা চালাচ্ছে। মাঝে মধ্যেই হাতির এ তাণ্ডবে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শত শত একর জমির মৌসুমি ফসল। লণ্ডভণ্ড করেছে বেশকিছু ঘরবাড়ি। তছনছ করছে বন বাগানের বিপুল পরিমাণের গাছপালা। হাতির হামলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পাহাড়ের গ্রামীণ জীবন। তাদের জীবন এখন হুমকির মুখে। 

বন্যহাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে রাতের বেলায় গ্রামবাসী আগুন জালিয়ে হৈ-হুল্লোড় করে। বাঁশ দিয়ে পটকা বানিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে ও মশাল জ্বালিয়ে হাতি তাড়ানো চেষ্টা করে আসছে। 

ভারতের মেঘালয় প্রদেশের সীমান্ত ঘেঁষে গারো পাহাড়ের শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কর্ণঝোড়া, বাবলাকোনা, রাজারপাহাড়, ঝোলগাঁও, কোচপাড়া, রাঙ্গাজান, খাড়ামোরা হারিয়াকোনা ও মেঘাদলসহ ১৩টি গ্রাম। 

নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও স্থলবন্দর এলাকার কাটাবাড়ি, পানিহাটা, খলচান্দা, হাতিপাগাড়, দাওধারা, বাতকুচি ও বুরুঙ্গাসহ প্রায় ১২টি গ্রাম। ঝিনাইগাতী উপজেলার বড় গজনী, ছোট গজনী, রাংটিয়া, সন্ধ্যাকুড়া, পানবড়, নকশী, তাওয়াকুচা ও গুরুচরন দুধনইসহ প্রায় ১৩ টি গ্রামে বাঙালী, খ্রিষ্টান, গারো, কোচ ও হাজংসহ বিভিন্ন গোত্র মিলে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করছে। 

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের বনাঞ্চল অপেক্ষাকৃত সমতল। ভারতের গহীন বনাঞ্চল রয়েছে অগণিত বন্যহাতি। এসব হাতি দল বেঁধে সমতল ভূমিতে চলাফেরা ও আহার করতে সহজ মনে করে থাকে। তাই সময় অসময়ে হাতির পাল সীমান্তপথ পাড়ি দিয়ে ওইসব সমতল বনাঞ্চলের আবাসিক ও কৃষি প্রধান এলাকায় চলে আসে। পাহাড়ে বসবাসরত বাড়িঘর, ফসলাদির জমি ও বিভিন্ন বাগানে প্রবেশ করে ধ্বংসলীলা চালায়। গত প্রায় ২২ বছর ধরে এসব বন্যহাতির তাণ্ডবলীলায় সীমান্তবর্তী পাহাড়ি গ্রামগুলোতে অসংখ্য ঘরবাড়ি ফসলের মাঠ বিধ্বস্ত হয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকার মানুষ পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে এবং পাহাড়ের পাদদেশে চাষাবাদ করে কোনরকম জীবিকা নির্বাহ করেন। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, অস্বাস্থ্য ও নানা বঞ্চনা তাদের নিত্যসঙ্গী। এর ওপর প্রায় বন্যহাতির আক্রমণে দিশেহারা করে দিয়েছে তাদের। হাতির আতঙ্কে এমনিতেই হাজার হাজার একর জমি পতিত থাকছে। ঝুঁকি নিয়ে চাষাবাদ করলেও সে ফসল তারা ঘরে তুলতে পারছে না। ফলে পাহাড়ি জনপদের মানুষগুলো হাতির সঙ্গে যুদ্ধ করে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। 

নালিতাবাড়ী উপজেলার খলচান্দা গ্রামের জুলফিকার আলী ভুট্রো জানান, বন্যহাতি ঢাকঢোল পটকা ও আগুনকে ভয় পায়। তাই এলাকাবাসী মশাল ও বন থেকে কুড়িয়ে আনা আবর্জনা জ্বালিয়ে হৈ-হুল্লোড় করে বাঁশ দিয়ে পটকা বানিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে ও মশাল জ্বালিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করে। অনেক সময় বাঁধা না পেলে হাতির দল গ্রামে প্রবেশ করে জানমালের ক্ষতিসাধন করে থাকে। 

শ্রীবরদী উপজেলার লাউচাপড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, ক্ষুধার্ত হলেই খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসে হাতির দল। যখন বসতবাড়িতে তাণ্ডব চালায় আর তখনই কেউ না কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
 
এ ব্যাপারে শেরপুরের বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুমন সরকার বলেন, বন্যহাতির তাণ্ডব থেকে মানুষ ও হাতিকে বাঁচাতে এরইমধ্যেই সরকার গারো পাহাড়ে অভয়ারণ্য সৃষ্টি ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপুরণে নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ বৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে বন্যহাতির আক্রমণে নিহত ব্যক্তির পরিবারের জন্য ৩ লাখ, আহতকে ১ লাখ এবং ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষতিগ্রস্তকে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে মানুষ ও বন্যহাতির দ্বন্দ্ব নিরসনে পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মশালা পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।  

গাজীপুর কথা