ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

সাগরকন্যার বুকে দাঁড়িয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পর্যটকদের ভিড়

প্রকাশিত: ১৫:০৯, ৩১ ডিসেম্বর ২০২১

সাগরকন্যার বুকে দাঁড়িয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পর্যটকদের ভিড়

বিশ্বজুড়ে ইংরেজি নববর্ষকে স্বাগত জানানোর রাত থার্টি ফার্স্ট নাইট (৩১ ডিসেম্বর) ঘিরে থাকে কোটি মানুষের উচ্ছ্বাস। দেশের ভেতরে এই আনন্দ উদযাপনের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বেলাভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নতুন বছর ২০২২-কে বরণ করে নিতে লোকজন এসেছেন কুয়াকাটায়।

ইংরেজি বছরের শেষ সূর্যাস্ত ও নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়ের অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য দর্শনের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরন করতে কুয়াকাটায় ইতিমধ্যে ভিড় জমেছে পর্যটকদের। ইংরেজি নববর্ষে পর্যটকদের বরন করতে প্রস্তুত রয়েছে সাগরকন্যা কুয়াকাটা। নতুন বছর বরনে প্রতি বছরের এই শেষ সময়ে কুয়াকাটায় ভিড় জমে দেশি-বিদেশি লাখো পর্যটকদের। তারই ধারাবাহিকতায় এবারেও সাজানো হয়েছে হোটেল-মোটেল সহ পর্যটন স্পটগুলো।

এরমধ্যেই অধিকাংশ হোটেলের রুম বুকিং হয়ে গেছে বলে জানা যায়, এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন পর্যটন নির্ভর ব্যাবসায়ীরা। দীর্ঘ দুই বছরের করোনার ক্ষতি খানিকটা হলেও সামলে উঠতে পারবে বলে আশাবাদী তারা। নতুন বছরের প্রথম দিন শুক্রবার থাকায় এবার পর্যটকদের উপস্থিতি দ্বি-গুণ থাকবে বলে মনে করছেন সকলে।

বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখা যায় একমাত্র কুয়াকাটায়। পৃথিবীর আর কোথাও এমন একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায় না। যার কারনে কুয়াকাটায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের এই অপরূপ দৃশ্য দেখতে সবসময়েই ভীষণ উৎসাহ আর উদ্দীপনা নিয়ে ভীড় জমে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের।

তার ধারাবাহিকতায় এবারেও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আগত পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকবে ১৮ কিলোমিটারের কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত,পর্যটকদের অবিরাম ছুটে চলা লাল কাঁকড়া, শুটকি পল্লী, লেবুর বন,ঝাউবন,ঝিনুক চর,তিন নদীর মোহনা, মিশ্রি পাড়া,বৌদ্ধ মন্দির,কুয়াকাটার কুয়া,গঙ্গামতির লেক।

সমুদ্র পথে পর্যটকরা আনন্দে মেতে উঠবে চর বিজয়, ফাতরার বন, ফকির হাট, সোবাকাটা। বছরের শেষ সূর্যদয়কে বিদায় আর নতুন সূর্যকে বরন করতে দেশী-বিদেশী হাজারো পর্যটকদের ভিড় জমতে শুরু করেছে কুয়াকাটায়।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শীতের আকাশে সূর্যের লুকোচুরি খেলা। বইছে হিমেল হাওয়া। তীব্র শীতে সৈকতের বালিয়ারীতে প্রিয়জনদের সাথে অবিরাম ছুটোছুটি আর সমুদ্রের গর্জন যেন পর্যটকদের মুগ্ধ করে তুলছে প্রতিমুহূর্তে । নানান বয়সী পর্যটকের আগমনে রাখাইন মার্কেট, ঝিনুকের দোকান,খাবারঘর, চটপটির দোকানসহ পর্যটন নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফিরে পেয়েছে প্রাণচাঞ্চল্যতা । দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসা ভ্রমণপিপাসু পর্যটকের উন্মাদনায় সৈকত জুড়ে বিরাজ করছে আনন্দময় পরিবেশ।

সব মিলিয়ে পর্যটকদের নিয়ে ব্যস্ত সময় কাঁটাবেন মটরবাইক চাল, ইজিবাইক, অটোরিক্সা, ফটোগ্রাফার সহ পর্যটক নির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। বেশ কিছু হোটেল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনায় গত দুই বছরে যে পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা কাঙ্ক্ষিত পর্যটকের আগমন ঘটলে কিছুটা হলে ক্ষতি মোকাবেলা করে ওঠা সম্ভব।

জানা যায়, ১৬০ টি আবাসিক হোটেল রয়েছে কুয়াকাটায়। প্রায় ৮ হাজার মানুষের রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। গত দুই বছর করোনার কারনে প্রতিটি হোটেল ব্যবসায়ী সহ পর্যটক নির্ভর ক্ষুদ্র – মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ীদেরও লোকসানের কারনে ঘাম ঝড়েছে কঁপাল থেকে। তবে এবছর পর্যটকদের উপস্থিতি বেশ ভালো লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখন পর্যটকদের পদচারণায় আবারও আগের মতো উৎসবের আমেজে মেতে উঠছে কুয়াকাটা। গত ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন থেকেই আগের প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে পেতে শুরু করেছে কুয়াকাটায়।

ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টায়াক) সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, কুয়াকাটায় পুরো ডিসম্বর মাস জুড়েই অসংখ্য পর্যটকরা ভ্রমণে আসেন। গত দুই বছর করোনার কারনে তেমটা না হলেও এবছর আবার আগের মতোই উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে কুয়াকাটায়। বিশেষ করে বছরের এই শেষ দিনে সমুদ্র সৈকত এলাকা কানায় কানায় ভরে যায়।

তিনি বলন, ট্যুর অপারেটরস, কুয়াকাটার পর্যটনমুখী ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় মানুষ পর্যটক সেবায় খুবই আন্তরিক। এখানে পর্যটন পুলিশের পাশাপাশি বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যরা পর্যটকদের সেবার মান নিশ্চিত করতে সচেষ্ট। কক্সবাজারের মত এখানে কোন অপ্রতিকর ঘটনা ঘটার কোন সুযাগ নেই।

অধিকাংশ হোটেল মোটেল বুকিং রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার। তবে সকল পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার কোন ঘাটতি থাকবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনসপেক্টর মোঃ হাচনাইন পারভেজ জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় তরী করা হয়েছে। দর্শনীয় স্পটগুলোতে নিরাপত্তা বসানা হয়েছে। তিনি আরও জানান, পর্যটন পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশ এবং সাদা পাশাকে গোয়েন্দা পুলিশ সার্বক্ষনিক নজরদারী করছে।

গাজীপুর কথা