ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

সেদিন আমিনবাজারে যা ঘটেছিল

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ২ ডিসেম্বর ২০২১

সেদিন আমিনবাজারে যা ঘটেছিল

ঢাকার অদূরে সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামে ২০১১ সালের ১৭ জুলাই পবিত্র শবে বরাতের রাতে সাত বন্ধু ঘুরতে গিয়েছিলেন। রাত সোয়া ১টার দিকে স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্ত সাত ছাত্রকে ডাকাত বলে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে। এতে ছয় ছাত্র মারা যান। একজন গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান।
সেদিনের ঘটনায় নিহত ছয় জন হলেন- কামরুজ্জামান, টিপু সুলতান, শামস রহিম, তৌহিদুর রহমান, ইব্রাহিম খলিল ও সিতাব জাবির। আর পিটুনিতে গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান আল-আমিন। তিনি ওই ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় ২০১৬ সালে আদালতে সাক্ষ্য দেন।
তার দেওয়া ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ১৭ জুলাই পবিত্র শবে বরাতের রাতে ছয় বন্ধুসহ তিনি দারুস সালাম এলাকার একটি মসজিদে নামাজ পড়েন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হন। ওই রাতের ১২টার দিকে বিরিয়ানি খেতে তারা গাবতলীর দিকে যান। তবে বিরিয়ানি না পাওয়ায় হাঁটতে থাকেন। হাঁটতে হাঁটতে তারা আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামে পৌঁছান।
আল-আমিন জানান, রাত সোয়া ১টার দিকে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে বড়দেশী এলাকার একটি কুঁড়েঘরে আশ্রয় নেন তারা। ওই সময় একদল লোক আচমকা ডাকাত বলে চিৎকার দিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা চোখে টর্চ লাইটের আলো ফেলে জানতে চায়, তারা কোথায় থেকে এসেছেন। ছাত্র পরিচয় দিয়ে দারুস সালাম এলাকা থেকে ঘুরতে বের হওয়ার কথা বললেও হামলাকারীরা বলে ‘তোরা ডাকাত’। এরপর সবাই তাদের মারতে শুরু করে।
আদালতকে দেওয়া সাক্ষ্যে তিনি আরও জানান, তিনিসহ তার বন্ধুরা হামলাকারীদের কাছে বাঁচার জন্য আকুতি জানান। কিন্তু তাদের আকুতিতে হামলাকারীদের মন গলেনি। তারা মারধর চালিয়ে যাচ্ছিলেন। 
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ১০ বছর আগের ওই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছেন ঢাকা জেলার দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক ইসমত জাহান। এই মামলায় ৬০ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। বিচারক রায়ে ১৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২৫ জনকে খালাস দিয়েছেন। বিচারাধীন অবস্থায় তিন জন মারা গেছেন। 
মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ১৩ জনের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সাজা দেওয়া হয়। আর যাবজ্জীবন প্রাপ্তদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- আব্দুল মালেক, সাঈদ মেম্বার, রশিদ, ঈসমাইল, লিমন, মীর হোসেন, মজিবর রহমার ওরফে বরিশাইল্লা মজিবর, আনোয়ার হোসেন, রজব আলী, আলম, মো. রানা, আব্দুল হামিদ ও আসলাম মিয়া।
উল্লেখ্য, ঘটনার পর নিহতদের বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগ এনে গ্রামবাসীর পক্ষে সাভার মডেল থানায় মামলা করেন বালু ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক। তদন্তে ডাকাতির মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং ছয় ছাত্রকে হত্যার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে সাভার থানায় একটি মামলা করে। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলাটি র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি র‌্যাব ৬০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে একটি অভিযোগপত্র জমা দেয়। অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয় ৯২ জনকে।

গাজীপুর কথা