ঢাকা,  মঙ্গলবার  ২৩ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

চোখের জলে শেষ ঘণ্টা বাজালেন ইউনুচ আলী

প্রকাশিত: ১৫:০২, ৩০ নভেম্বর ২০২১

চোখের জলে শেষ ঘণ্টা বাজালেন ইউনুচ আলী

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার জালালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দফতরি ইউনুচ আলী (৬০) আজ বাজালেন শেষ ঘণ্টা। এর আগে তিনি ৪৭ বছর সেখানে ঘণ্টা বাজিয়েছেন। ১৩ বছর বয়সে বিদ্যালয়টিতে দফতরি হিসেবে চাকরি শুরু করেছিলেন ইউনুচ আলী। মঙ্গলবার তিনি চাকরি থেকে অবসর নেন।

ইউনুচ আলী অঝোরে চোখের পানি ফেলে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। ৪৭ বছরে কখনো একটা কারণ দর্শানো নোটিশ তাকে দেওয়া হয়নি। শিক্ষকেরা ছিলেন তার অভিভাবক আর শিক্ষার্থীরা ছিল সন্তান। আজ সব ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে। বাকি জীবনটা কীভাবে কাটবে, সেটা ভাবতেই চোখে পানি চলে আসছে তার।
  
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কুশনা ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের শিক্ষানুরাগী লোকজন ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন এই মাধ্যমিক বিদ্যালয়।  

ইউনুচ আলী ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শাখারীদহ গ্রামের মৃত ইয়ার আলী মণ্ডলের ছেলে। পরিবারে তার স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।

জানা যায়, মাত্র ১৩ বছর বয়সে মামা নূর আলী মণ্ডলের ডাকে জালালপুর গ্রামে নানার বাড়িতে আসেন। মামা জালালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দফতরি হিসেবে চাকরিতে ঢুকিয়ে দেন। সেই থেকে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। পৈতৃক বাড়ি অন্য উপজেলায় হওয়ায় এখানে এসে মামার বাড়িতে থাকতেন।  স্কুলকে ভালোবেসে স্কুলের জমির পাশেই পরে জমি কিনে বাড়ি করেছেন।  
 
ইউনুচ আলী জানান, দফতরির চাকরি করেই ৩০ শতক জমি কিনে সেখানে ফ্ল্যাট বাড়ি করেছেন তিনি। মাঠে তিন বিঘা চাষযোগ্য জমি কিনেছেন। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করাচ্ছেন। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় মেয়ে অনার্স পড়ছেন। ছেলে উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সবার ছোট মেয়ে এই বিদ্যালয়েই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে।

তিনি জানান, প্রথম চাকরিতে যোগদানের পর প্রতিষ্ঠান ৩০ টাকা করে দিত, সরকার থেকে পেতেন ৫০ টাকা। প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ার পর পেতেন ১২০ টাকা। বর্তমানে ১০ হাজার ৩৫০ টাকা বেতন পেয়ে তিনি অবসরে গেলেন।

প্রধান শিক্ষক মোছা. আক্তার জাহান বলেন, ইউনুচ আলী সদা হাসিখুশি মানুষ। সব শিক্ষকের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। তিনিই এই প্রতিষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি দিন চাকরি করেছেন।  কারও বিপদ-আপদে তার তুলনা ছিল না।

 প্রধান শিক্ষক বলেন, শেষ দিনে ইউনুচ আলী শেষ ঘণ্টাটি বাজানোর পর তারা ফুল ও কিছু উপহারসামগ্রী দিয়ে তাকে বিদায় জানিয়েছেন। 

গাজীপুর কথা