ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

২৫ জানুয়ারি, মাইকেল মধুসুধন দত্তের জন্মদিন

প্রকাশিত: ১৮:৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০২২

২৫ জানুয়ারি, মাইকেল মধুসুধন দত্তের জন্মদিন

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও নাট্যকার তথা বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম আধুনিক কবি, প্রথম সার্থক নাট্যকার। আধুনিক বাংলা কবিতার পথ নির্মাতাও তিনি।

২৫ জানুয়ারি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ ও কবিতায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মদিন। যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে ১৮২৪ সালের জন্মগ্রহণ করেন এই কবি।

প্রকৃতির অপূর্ব লীলাভূমি সাগরদাঁড়ি গ্রামে তার শৈশব ও কৈশোর কাটলেও পরে তিনি পরিবার-পরিজনের সঙ্গে বসবাস করেন কলকাতার খিদিরপুরে। তবে সাগরদাঁড়িতে বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী কপোতাক্ষকে তিনি কখনো ভোলেননি। তাই সুদূর ভার্সাই নগরীতে বসেও তিনি লিখেছিলেন- ‘সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে, সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।’

তিনি ছিলেন রাজনারায়ণ দত্ত ও তার প্রথমা পত্নী জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান। কবির বাবা রাজনারায়ণ দত্ত কলকাতার ওকালতি করতেন। মা জাহ্নবী দেবী গুণবতী রমণী ছিলেন। মধুসূদন বাল্যকালেই মায়ের কাছে রামায়ণ, মহাভারত, চণ্ডীর মতো কাব্যছন্দে রচিত হিন্দু পুরাণ সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন। সাগরদাঁড়ি সংলগ্ন শেখপুরা গ্রামের মৌলভী লুৎফুল্লাহর কাছে ফারসি ভাষাও আয়ত্ত করেন তিনি। ১৮৫৩ সালে খ্রষ্টধর্ম গ্রহণ করেন কবি। তখন থেকে তার নামের সঙ্গে ‘মাইকেল’ যুক্ত হয়।

 

 

মধুসূদন দত্ত মাত্র চার-পাঁচ বছর সাহিত্যচর্চা করে বাংলা সাহিত্যকে উর্বর করেছেন। তিনি পদ্মাবতী নাটক, তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ ও ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নামে দুটি প্রহসন, মেঘনাদবধ কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য, কৃষ্ণকুমারী নাটক, বীরাঙ্গনা কাব্য ও চতুর্দশপদী কবিতা রচনা করেন।

মাদ্রাজে গিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভের চেয়েও কবি যে বিশেষ কাজটি করেছিলেন তা হচ্ছে এক শ্বেতাঙ্গিনীকে বিয়ে করা। মাদ্রাজে অবস্থানকালীন সময়ে তিনি রেবেকা ম্যাকটাভিশ নামক এক ইংরেজ যুবতীকে বিয়ে করেন। অরফান আস্যাইলাম স্কুলে পড়াতে শুরু করার পরই পরিচয় হয় তার ভাবী স্ত্রী রেবেকার সঙ্গে। বিয়ের এই প্রক্রিয়াটি অবশ্য খুব সহজ ছিল না। তার বন্ধু গৌরি দাশকে লিখেছিলেন ‘রেবেকাকে পেতে খুব ঝামেলা হয়েছিল, বুঝতেই তো পারছো তার (রেবেকা) সমস্ত শুভাকাঙ্ক্ষী এই বিয়ের বিরুদ্ধে ছিল।’ তাদের বিয়ে হয় ৩১ জুলাই ১৮৪৮ সালে। বিদেশে গিয়ে রোগ ভোগ করা, চাকরি জোটানো তারপর এই বিদেশিনীকে বিয়ে করা এই সবই হয়েছিল মাদ্রাজ পৌঁছানোর ছয়মাসের ভেতরে।

কিন্তু তাদের এই দাম্পত্য জীবন বেশি দিন স্থায়ী ছিল না। তিনি ভেবেছিলেন বিয়ের পর তার প্রাণের রেবেকাকে সাথে নিয়ে সুখী হবেন। কিন্তু সুখ জিনিসটা বিধাতা হয়ত তার কপালে লেখেননি। সংসারের নানা ঝঞ্ঝাট, গোলমাল দেখা দিল। মাইকেলের একগুয়েমির কারণে স্ত্রীর মতের সঙ্গে অমিল হতে লাগল। এর ফলে তিনি কয়েক বছরের মধ্যেই রেবেকার সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করেন। রেবেকার গর্ভে মধুসূদনের দুই পুত্র ও দুই কন্যার জন্ম হয়।

মাদ্রাজ জীবনের শেষ পর্বে রেবেকার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার অল্পকাল পরে মধুসূদন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজের কোনো এক শিক্ষকের কন্যা হেনিরিয়েটা সোফিয়া নামে এক ফরাসি তরুণীকে বিবাহ করেন। হেনিরিয়েটাও সর্বগুণ সম্পন্ন রুচিমার্জিত মেয়ে ছিলেন। হেনিরিয়েটা মধুসূদনের সারাজীবনের সঙ্গিনী ছিলেন। তাদের নেপোলিয়ান নামক এক ছেলে এবং শর্মিষ্ঠা নাম এক মেয়ে। তার বংশধরদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিখ্যাত টেনিস খেলোয়াড় লিয়েন্ডার পেজ।

মধুসূদনের শেষ জীবন চরম দুঃখ ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। আইন ব্যবসায়ে তিনি তেমন সাফল্য লাভ করতে পারেন নি। এছাড়া অমিতব্যয়ী স্বভাবের জন্য তিনি ঋণগ্রস্তও হয়ে পড়েন। ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুন আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে কলকাতার সাক‌ুলার রোডে সমাধি দেওয়া হয়।

গাজীপুর কথা