ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

‘বাচ্চার হার্টে ছিদ্র, বাধ্য হয়ে দেহ ব্যবসায় লিপ্ত হয়েছি’

প্রকাশিত: ১৩:০৫, ২৬ ডিসেম্বর ২০২১

‘বাচ্চার হার্টে ছিদ্র, বাধ্য হয়ে দেহ ব্যবসায় লিপ্ত হয়েছি’

কক্সবাজারে স্বামী সন্তান নিয়ে বেড়াতে এসে গণ ধ র্ষ ণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন এক নারী। স্বামী-সন্তানকে জিম্মি ও হত্যার ভয় দেখিয়ে তাকে দুইবার গণ ধ র্ষ ণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ঐ নারী।

যদিও পুলিশ বলছে, ধ র্ষ ণের শিকার ঐ নারী পতি তাবৃত্তির অভিযোগে কক্সবাজার সদর মডেল থানার হাতে আটক হয়েছিলেন কয়েকমাস আগে। কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনের লাইট হাউজ এলাকায় আবাসিক কটেজ থেকে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে ঐ নারীসহ ৫২ জনকে আটক করা হয়েছিল।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার একটি সূত্র জানা যায়, চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি কটেজগুলোতে অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসার খবরে পুলিশের একটি দল অভিযান চালায়। রাত ৯টায় পুলিশের অভিযানে ঐ নারীসহ ৫২ জনকে আটক করা হয়।

এদিকে ধ র্ষ ণের শিকার  নারীর আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, আমার আট মাস বয়সী বাচ্চার হার্টে ছিদ্র। তার চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। কোথাও কোনো উপায় না দেখে অসুস্থ বাচ্চার চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে স্বামীসহ কক্সবাজার এসেছি। এখানে গত তিন মাস ধরে অবস্থান করছি। টাকা জোগাড়ে যখন যেখানে ডাক পেয়েছি গিয়েছি। তার চিকিৎসার জন্যই এ কাজ বাধ্য হয়ে করেছি। এ সময়ে সন্ত্রাসীদের খপ্পরে পড়ি। বাধ্য হয়ে ১০ হাজার টাকা চাঁদাও দিয়েছি। পরে আবার চাঁদা চাইলে স্বামীর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের বাগবিতণ্ডা হয়। এর সূত্র ধরে তুলে নিয়ে ধ র্ষ ণ করে তারা।

শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজার সদরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হামীমুন তানজিনের আদালতে জবানবন্দিতে এসব বলেন ঐ নারী।

ঐ নারী জবানবন্দিতে আরো বলেন, গত বুধবার রাত ৮টার দিকে সৈকত পোস্ট অফিসের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানে নিয়ে যাওয়া হয় আমাকে। সেখানে আশিকের দুই বন্ধু আমাকে ধ র্ষ ণ করে। এরপর আশিক আবার মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় কলাতলী এলাকার জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। আমাকে নিয়ে ঐ হোটেলের একটি কক্ষে ওঠে আশিক। সেখানে ইয়া বা সেবন করে ধ র্ষ ণ করে। এক পর্যায়ে একটি ফোন কলে পুলিশের উপস্থিতির কথা জানতে পেরে আশিক কক্ষ থেকে দ্রুত বের হয়ে যায়।

ভুক্তভোগী ঐ নারী আরো বলেন, আমি হোটেল কক্ষ থেকে বের হয়ে পর্যটন মোটেলের সামনের সড়কে আসি। সেখানে র‌্যাবের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে স্বামীকে কথা বলতে দেখি। পরে র‌্যাব আমাকে নিয়ে হোটেল জিয়া গেস্ট ইনে আসে।

চাঞ্চল্যকর এ ধ র্ষ ণের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই নারীর স্বামী।

মামলার আসামিরা হলেন; আশিকুল ইসলাম এবং তার তিন সহযোগী আবদুল জব্বার ওরফে ইস্রাফিল হুদা ওরফে জয়, মেহেদী হাসান ওরফে বাবু ও রিয়াজ উদ্দিন ছোটন।

টুরিস্ট পুলিশকে মামলার তদন্ত ভার দেওয়া হয়েছে। আসামিদের মধ্যে জিয়া গেস্ট ইনের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে বৃহস্পতিবার রাতেই গ্রেফতার করে র‌্যাব। এদের মধ্যে কক্সবাজার সদর থানায় আশিকের নামে অস্ত্র, মাদক, নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজিসহ ১৭টি এবং জয়ের নামে দুটি মামলা রয়েছে। তারা এখনো কক্সবাজার শহরে অবস্থান করছেন বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে।

কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন জানান, গৃহবধূ ধ র্ষ ণের ঘটনার মধ্যে অনেক 'রহস্য' পাওয়া যাচ্ছে। তার বক্তব্যের সঙ্গে স্বামীর বক্তব্যের মিল নেই। পাশাপাশি এই গৃহবধূ গত কয়েক মাসের মধ্যে কক্সবাজার বেশ কয়েকবার এসেছেন। সুতরাং তাকে প্রাথমিক দৃষ্টিতে পর্যটক বলা যাচ্ছে না। কারণ এই নারী বারবার কক্সবাজার আসার পেছনে অন্য রহস্য লুকিয়ে আছে।

তিনি বলেন, তাছাড়া নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি নিজেকে তিনটি নামে পরিচয় দিয়েছেন। হোটেলে বলেছেন সানজিদা, অন্য জায়গায় বলেছেন সাফি। আবার আমাদের কাছে বলেছেন মায়াবি বেগম। এছাড়া আমরা গৃহবধূর মা-বাবার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বারণ করেন এবং কথা বলতে দেননি। পাশাপাশি তাদের বিয়ের তারিখ সম্পর্কে জানতে চাইলে গৃহবধূ দিয়েছেন এক তথ্য, আবার তার স্বামী দিয়েছেন আরেক তথ্য।

আদালতে দেওয়া ঐ নারীর জবানবন্দির বিষয়টি স্বীকার করে কক্সবাজারে টুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, কারো অসম্মতিতে মিলন করা মানে তাকে ধ র্ষ ণ করা হয়েছে।  ঐ নারী যদি তার সন্তান বাঁচানোর জন্য অসামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত হন, এটি তার ব্যক্তিগত এবং পারিপার্শ্বিক বিষয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে তিনি দাবি করেছেন তাকে ধ র্ষ ণ করা হয়েছে। এখন আমরা সব বিষয় মাথায় রেখে মামলাটি তদন্ত করছি। একই সঙ্গে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে।

গাজীপুর কথা