ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ১৮ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের চেষ্টা অব্যাহত

প্রকাশিত: ০৮:২৪, ২৯ নভেম্বর ২০২১

পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের চেষ্টা অব্যাহত

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করতে সরকার অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, মুজিববর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে অন্য অনেক দেশের মতো এ দেশকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। অথচ ওই দেশে আশ্রয় পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ঘাতকদের দুজন। ওই দেশগুলো অপরাধের দায়মুক্তির বিরুদ্ধে। এর পরও ওই দেশগুলো অপরাধের বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য ওই ঘাতকদের বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে না। এর ফলে বিদেশে কার্যত দায়মুক্তি নিয়ে বিচার এড়িয়ে চলছে ঘাতকরা।

দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে বঙ্গবন্ধু হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১২ ঘাতকের মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয় ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি। তারা হলো- সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ এবং এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ। বাকি ঘাতকরা বিচার এড়াতে বিদেশে পালিয়ে আছে। গত বছরের ৭ এপ্রিল ঢাকায় আকস্মিকভাবে ধরা পড়ে আবদুল মাজেদ। এরপর ১২ এপ্রিল তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ভারতের গণমাধ্যম গত বছর এপ্রিল মাসে বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি রিসালদার মোসলেম উদ্দিন গ্রেপ্তার হওয়ার খবর দিলেও পরে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আর কিছু জানা যায়নি। ফেরারি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এর আগে দীর্ঘদিন জার্মানিতে পালিয়ে আছে-এমন সন্দেহ করা হচ্ছিল। এ বিষয়ে জার্মান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও বাংলাদেশ সরকার নিশ্চিত তথ্য পায়নি। কথিত আছে, ২০০১ সালের ২ জুন খুনি আবদুল আজিজ জিম্বাবুয়েতে মারা গেছে। তবে তার মৃত্যু নিয়েও আছে অস্পষ্টতা।

অপর চার ঘাতকের অন্যতম এম এ রাশেদ চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছে। তাকে ফেরত পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে অনুরোধ জানিয়ে আসছে। রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার ১৫ বছর পর ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার আশ্রয় পাওয়া সংক্রান্ত মামলা আবারও সচল করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ওই উদ্যোগের কী ফল এসেছে বা কত দূর এগিয়েছে, তা আর জানা যায়নি। বাংলাদেশ আশা করছে, যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় আসায় এ মামলার প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে।

কানাডায় আছে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ঘাতক নূর চৌধুরী। কানাডার উচ্চ আদালত ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ওই দেশটিতে নূর চৌধুরীর অবস্থান সংক্রান্ত গোপনীয়তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জুডিশিয়াল রিভিউয়ের’ আবেদন মঞ্জুর করেন। এর পরও নূর চৌধুরীকে ফেরানোর বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। তা ছাড়া কানাডার মৃত্যুদণ্ডবিরোধী অবস্থান আছে। মৃত্যুদণ্ড হতে পারে এমন কোনো ব্যক্তিকে কানাডা অন্য দেশে পাঠায় না। এটিও ঘাতক নূর চৌধুরীকে  ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা।

সরকারের কাছে তথ্য ছিল, ঘাতক শরিফুল হক ডালিম কেনিয়া ও জিম্বাবুয়েতে ব্যবসা করছে। খন্দকার আবদুর রশিদকে পাকিস্তানে দেখা গেছে-এমন তথ্যও ছিল। এর ভিত্তিতে কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে তথ্য চেয়েছিল, কিন্তু পাকিস্তান এর কোনো জবাব দেয়নি। অভিযোগ আছে, পলাতক ওই ঘাতক পাকিস্তানি পাসপোর্ট ব্যবহার করছে। ১৯৭৫ সালে ওই ঘাতক চক্রকে বাংলাদেশ থেকে নিরাপদে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য পাকিস্তান সহযোগিতা করেছিল।

ঐতিহাসিক দলিল থেকেও জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়েও আগে থেকে জানত কিছু দেশ। আমেরিকান সাংবাদিক লেখক বি জেড খসরুর ইংরেজিতে লেখা ‘বাংলাদেশ মিলিটারি ক্যু সিআইএ লিংক’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে, খন্দকার মোশতাক আহমেদ ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে টালমাটাল পরিস্থিতির সময় বঙ্গবন্ধুর খুনি এবং তাঁর নিজের জন্য আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় খালেদ মোশাররফের বিরুদ্ধে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যও কামনা করেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় পুরনো সম্পর্কের দাবি নিয়ে তিনি নিজের এবং খুনি ফারুক ও রশিদের জন্যও যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইতিবাচক বার্তাও মিলেছিল। বাস্তবতা হলো, সেই যুক্তরাষ্ট্রে এখন রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছে ঘাতক রাশেদ চৌধুরী।

গাজীপুর কথা