ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

যশোরে ভয়ঙ্কর রূপে ওমিক্রন

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ২৪ জানুয়ারি ২০২২

যশোরে ভয়ঙ্কর রূপে ওমিক্রন

রেড জোনে থাকা সীমান্তবর্তী জেলা যশোরে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। পাশাপাশি ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরণ। ঢাকার বাইরে প্রথম যশোরে শনাক্ত হয় ভয়ঙ্কর ধরণ ওমিক্রন। যা দিনে দিনে ছড়িয়ে পড়ছে। 

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যারয়ের ল্যাবে ৪১ নমুনার মধ্যে ৩৫ জনেরই ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। এরা সবাই যশোরের স্থায়ী বাসিন্দা। শনাক্ত হওয়াদের বিদেশ ভ্রমণের কোনো ইতিহাস নেই। বিদেশফেরত কারো সংস্পর্শে আসার কথাও জানা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে যশোরে ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে বলে জানিয়েছেন যবিপ্রবি জিনোম সেন্টারের গবেষক দলের সদস্যরা। 

তারা বলছেন, ওমিক্রন খুবই দ্রুত সংক্রমণশীল। এ কারণে যশোর অঞ্চলে এটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ৩০ শতাংশের অধিক নমুনা পজিটিভ শনাক্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির একদল গবেষক করোনার নতুন এ ধরণ শনাক্তের বিষয়টি রোববার প্রকাশ করেন। 

ঠান্ডা, গলা ব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, হালকা জ্বর রয়েছে নমুনা নেয়াদের। গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪১ জনের নমুনার মধ্যে ৩৫ জনের স্পাইক প্রোটিনের স্যাঙ্গার সিকুয়েন্সিং-এর মাধ্যমে ১২ থেকে ১৩টি মিউটেশনের উপর ভিত্তি করে ওমিক্রন শনাক্ত করা হয়েছে। বাকিগুলো ডেল্টা ধরণ বলে শনাক্ত করা হয়। এর আগে গত ১২ জানুয়ারি জিনোম সেন্টারে তিন জনের নমুনায় ওমিক্রন শনাক্ত করা হয়। 

যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, যশোর অঞ্চলে ওমিক্রন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ৩০ শতাংশের অধিক নমুনা পজিটিভ শনাক্ত হচ্ছে। 

জিনোম সেন্টারে ৪১ জনের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সে ৩৫ জনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। এটি নমুনা পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণ অনেক বেশি। ফলে যশোরে করোনার নতুন ধরণ ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। আমরা যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে যাদের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত করেছি তারা সবাই যশোরের বাসিন্দা। শনাক্তদের বিদেশ ভ্রমণের কোনো ইতিহাস নেই। বিদেশফেরত কারো সংস্পর্শে আসার কথাও জানা যায়নি। ফলে আমরা ধরে নিচ্ছি, ওমিক্রন ধরনের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন যশোরে শুরু হয়ে গেছে। 

তিনি আরো বলেন, গবেষণায় লক্ষ্য করেছি, যারা করোনার টিকা গ্রহণের পর ওমিক্রনে সংক্রমণ হচ্ছেন তারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে কম। এমনকি তারা অনেক সুস্থ থাকছেন। এজন্য এখনো যারা টিকা গ্রহণ করেননি; তাদের উচিত দ্রুতই করোনার টিকা গ্রহণ করা। আর মাস্ক ব্যবহারসহ কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানিয়েছেন, যশোরে করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। করোনার মধ্যে যশোরে ওমিক্রন উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। তবে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ করোনার এই নতুন ধরণ ওমিক্রন সামাজিক সংক্রমণ বা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে মানতে নারাজ। জেলায় এরই মধ্যে যারা ওমিক্রনে সংক্রমিত হয়েছে; তাদের সঙ্গে কারা সংস্পর্শে এসেছে তাদের নজরে রেখেছে স্বাস্থ্যবিভাগ। মূলত জনগণের অসচেতনতার কারণেই আমাদের জেলায় সংক্রমণের হার বাড়ছে। এই জেলাতে বহু মানুষের চলাচল। বেনাপোল বন্দর থাকায় প্রতিনিয়ত হাজার হাজার পরিবহন চলাচল করে। ভারত থেকে প্রচুর মানুষ যাতায়াতসহ পণ্য পরিবহন হয়ে থাকে। 

এদিকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাধারণ মানুষকে মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর  জোর দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ মানুষ মাস্কই পরছেন না। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষ মাস্কবিহীন চলাফেরা করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তেমন অভিযান চালানো হচ্ছে না। এজন্য শহরের অধিকাংশ বাণিজ্যিক এলাকায় জটলা লেগেই থাকছে। যাদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জনবল সংকটের কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা  করা সম্ভব হচ্ছে না।

যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সামেজ্জামান বলেন, ‘এই মুহূর্তে জেলা প্রশাসনের তিনজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট করোনায় আক্রান্ত। কয়েকদিন আগে সিনিয়র সহকারী কমিশনার জাকির হোসেন করোনায় আক্রান্ত হন। তিনি এখনো চিকিৎসাধীন। শনিবার সহকারী কমিশনার মাহমুদুল হাসান এবং কেএম মামুনুর রশীদ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এই মুহূর্তে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মেহরাজ শারমিন কর্মরত রয়েছেন। এই একজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন