ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স ফিরিয়ে দিয়ে সততার দৃষ্টান্ত দেখালেন রিকশাচালক

প্রকাশিত: ২১:১৯, ১৭ আগস্ট ২০২২

আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স ফিরিয়ে দিয়ে সততার দৃষ্টান্ত দেখালেন রিকশাচালক

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক মার্কিন নাগরিকের আইফোন পেয়ে তা ফেরত দিয়ে সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন রিকশাচালক আমিনুল ইসলাম।  

আমিনুল ইসলাম জানান, গত ৫ আগস্ট রিকশায় যাত্রী বসার গদির ফাঁকে বন্ধ অবস্থায় তিনি একটি মুঠোফোন (আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স) পান। মুঠোফোনটি বন্ধ অবস্থায় ছিল। চার্জ না থাকায় চালু করা যাচ্ছিল না। ফলে মুঠোফোনটির মালিক কে, তা বুঝতে পারছিলেন না। ৯ আগস্ট পুলিশের মাধ্যমে মুঠোফোনটি তিনি মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেন।

তিনি জানান, ৮ বছর ধরে গুলশান এলাকায় রিকশা চালান। ৫ আগস্ট গুলশান-২ নম্বর এলাকায় যাত্রী নামিয়ে দেওয়ার পর তিনি গদির ফাঁকে মুঠোফোনটি দেখতে পান। 

আমিনুল জানান, আইফোনের চার্জ না থাকায় নিজের মুঠোফোনে সিমটি চালু করেন। সিম চালু করার পর এক নারীর ফোন আসে। তিনি মুঠোফোনটির মালিকানা দাবি করেন। তখন তিনি ওই নারীকে মুঠোফোনটি নিয়ে যেতে বলেন। পরে তিনি পুলিশের মাধ্যমে মালিকের কাছে মুঠোফোনটি ফিরিয়ে দেন। 

সীমা আহম্মেদ জানান, মুঠোফোনটি তার ছেলে স্যামি আহম্মেদের। তারা যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। মাঝেমধ্যে বাংলাদেশে বেড়াতে আসেন। সেদিন তিনি ছেলেকে নিয়ে রিকশায় করে রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন। পথে মুঠোফোনটি হারিয়ে ফেলেন। মুঠোফোনে চার্জ ছিল না। তাই কলও করা যাচ্ছিল না। পরে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। একপর্যায়ে সিম চালু পান। ফোন করলে এক রিকশাচালক ধরেন। তিনি মুঠোফোনটি পাওয়ার কথা জানান। মুঠোফোনটি নিয়ে যেতে বলেন। তারা পুলিশকে এ তথ্য জানান। পরে আমিনুল পুলিশের কাছে মুঠোফোনটি পৌঁছে দেন। মুঠোফোন ফিরে পেয়ে তারা বেশ খুশি।

গুলশান থানার এএসআই আবদুল কাদির বলেন, মুঠোফোনটিতে রোবট তৈরির একটি প্রকল্পের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত ছিল। আমিনুল মুঠোফোনটি পেয়ে সততার সঙ্গে ফেরত দিয়েছেন।আমি প্রায় সাত বছরে সাড়ে চার হাজার মুঠোফোন উদ্ধার করেছি। কিন্তু কখনোই এমন সততার দৃষ্টান্ত দেখিনি। আমাদের সবার আমিনুলের কাছ থেকে শেখা উচিত।’

আমিনুল জানান, তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে। স্ত্রী জেসমিন আক্তারকে নিয়ে তিনি থাকেন বাড্ডা এলাকায়। জেসমিন একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তাদের দুই সন্তান আছে। তারা নানির কাছে থেকে লেখাপড়া করে।

অভাবের কারণে আমিনুল অষ্টম শ্রেণির পর আর লেখাপড়া করেননি। তবে তিনি কষ্ট করে হলেও তার দুই সন্তানকে লেখাপড়া করাতে চান। সন্তানদের নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন। ঢাকায় থাকাখাওয়া, লেখাপড়ার খরচ অনেক বেশি। তাই সন্তানদের গ্রামে রেখেছেন আমিনুল। তিনি প্রতি মাসে সেখানে খরচের টাকা পাঠিয়ে দেন। তিনি গরিব। সংসারে অভাব আছে। কিন্তু অন্যের সম্পদের ওপর তার কোনো লোভ নেই। সততা নিয়েই বাঁচতে চান তিনি।

আরো পড়ুন