ঢাকা,  মঙ্গলবার  ২৩ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

জ্বিনের বাদশা পরিচয়ে প্রেম-বিয়ে, অতঃপর...

প্রকাশিত: ২১:৩১, ৩ আগস্ট ২০২২

জ্বিনের বাদশা পরিচয়ে প্রেম-বিয়ে, অতঃপর...

গ্রেফতার আরজু আক্তার

জ্বিনের বাদশা পরিচয়ে প্রতারণাই ছিল জাকির হোসেন বাচ্চুর (৩৮) পেশা। প্রতারণার উদ্দেশ্যে ফোন দিলে পরিচয় হয় মোছা. আরজু আক্তারের (২৩) সঙ্গে।

ফোনে আলাপ থেকেই প্রথমে প্রেম, একপর্যায়ে বিয়ে করেন তারা। বিয়ের পর আরজু আক্তারকেও প্রতারণার কাজে যুক্ত করেন জাকির।
এদিকে আরজু আক্তারের সঙ্গে সংসার করলেও পরকীয়ায় আসক্ত জাকির প্রতারণার মাধ্যমে উপার্জিত সব অর্থ ব্যয় করতেন অনৈতিক কাজে। এ নিয়ে মনোমালিন্য থেকে একপর্যায়ে আরজুকে তালাক দেন তিনি।

তবে, তালাক হলেও তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মতো সম্পর্ক ছিল। প্রায়ই একসঙ্গে বসবাস করতেন। এরপরও জাকিরের একাধিক পরকীয়া সম্পর্ক ও তালাকের কারণে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন আরজু আক্তার। সে অনুযায়ী লঞ্চযোগে ভোলা যাওয়ার পথে কেবিনে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে জাকিরকে হত্যা করেন তিনি।

গত ২৯ জুলাই সদরঘাট এলাকায় এমভি গ্রিন লাইন-৩ লঞ্চের স্টাফ কেবিন থেকে জাকির হোসেন বাচ্চুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর ৩১ জুলাই দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহতের প্রথম স্ত্রী সুরমা আক্তার।

১ আগস্ট মামলার তদন্তভার বুঝে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্তের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) ভোরে সাভারের নবীনগর এলাকায় ঢাকাগামী একটি বাস থেকে আরজু আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়।

এদিনই আদালতে হাজির করলে আরজু আক্তার ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

বুধবার (৩ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম।

তিনি বলেন, জ্বিনের বাদশা জাকির হোসেন বাচ্চুর বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দীনে। সেখানে তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানরা থাকতেন। প্রতারণার উদ্দেশ্যে জাকির ২ বছর আগে একদিন ফোন দেন আরজু আক্তারকে। জ্বিনের বাদশা পরিচয়ে দেওয়া সেই ফোন থেকেই প্রেম, এরপর তাকে বিয়ে করে ঢাকার ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকেন।

বিয়ের পর আরজু জানতে পারেন তিনি জাকিরের দ্বিতীয় স্ত্রী। এরপরও জাকিরের একাধিক পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। এনিয়ে বিবাদের জেরে গত ২ মাস আগে তাদের তালাক হয়ে যায়। তালাক হলেও তারা একে অপরের বাসায় একসঙ্গে থাকতেন। তালাক দেওয়া ও একাধিক সম্পর্কের কারণে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন আরজু।

এরমধ্যে আরজু জানতে পারেন ২৯ জুলাই জাকির লঞ্চযোগে ভোলায় গ্রামের বাড়ি যাবেন। আরজুর বাড়ি জাকিরের বাড়ির পাশের গ্রামে। এ কারণ দেখিয়ে কেবিন ভাড়া করে তাকেও সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য জাকিরকে বলেন আরজু। এরপর ওইদিন সকালে এমভি গ্রিন লাইন লঞ্চের একটি স্টাফ কেবিন ভাড়া করে তারা ভোলার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। লঞ্চে ওঠার আগে একপাতা ঘুমের ওষুধ ও এক বোতল দুধ কিনে নেন আরজু।

পিবিআই এসপি বলেন, লঞ্চের কেবিনে প্রথমে তারা শারিরীক সম্পর্কে করেন। এরপর জাকির পানি আনতে লঞ্চের নিচতলায় গেলে দুধের বোতলে ৫টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রাখে আরজু। কিছুক্ষণ পর জাকির কেবিনে আসলে তাকে ওষুধ মেশানো দুধ খেতে বলে। দুধ খেয়ে জাকির ঘুমিয়ে পড়লে তার হাত-পা ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেলেন আরজু। এরপর আরেকটি ওড়না দিয়ে জাকিরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।

হত্যার পর জাকিরকে কেবিনের স্টিলের খাটের নিচে লুকিয়ে রুমটি ভালোভাবে গুছিয়ে রাখেন আরজু। এরপর লঞ্চটি ভোলার ইলশা ঘাটে পৌঁছালে নেমে যান তিনি। লঞ্চের ক্লিনার ওই কেবিনে এসে রুমটি গুছানো দেখে আর ভেতরে যাননি। দুপুরে লঞ্চটি আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে দুই নারী তিন বাচ্চাকে নিয়ে সেই কেবিনে ওঠেন।

এরমধ্যে একটি বাচ্চা খাটের নিচে গেলে এক নারী যাত্রী তাকে আনতে গিয়ে জাকিরের মরদেহ দেখতে পেয়ে লঞ্চের স্টাফদের খবর দেন। পরে স্টাফরা এসে মরদেহ দেখতে পেয়ে ঢাকার নৌ-পুলিশকে খবর দেয়। লঞ্চটি ঢাকার সদরঘাটে পৌঁছালে নৌ-পুলিশ এসে মরদেহটি উদ্ধার করে। এসময় পিবিআইও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

এই পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, মামলা হওয়ার পর তারা এর তদন্তভার নেন। তদন্তের ধারাবাহিকতায় আরজু আক্তারকে শনাক্ত করা হয়। আরজু ভোলা নেমে স্পিডবোট যোগে বরিশাল যান। সেখান থেকে বাসে দৌলতদিয়া হয়ে ঢাকা ফেরার পথে নবীনগর এলাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, কেবিনে কোনো যাত্রী উঠলে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র রাখার কথা। কিন্তু লঞ্চ কর্তৃপক্ষ জাকির ও আরজুর কোনো পরিরিচয়পত্র রাখেনি। এছাড়া, তারা যে কেবিনটি ভাড়া দিয়েছিল, সেটি ছিল স্টাফ কেবিন। স্টাফ কেবিন হওয়া স্বত্বেও তাদের কাছে অনৈতিকভাবে ভাড়া দেয় লঞ্চের স্টাফরা।

    আরো পড়ুন