ঢাকা,  শুক্রবার  ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

গাজীপুরে আমলকী চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা, যাচ্ছে বিদেশে

প্রকাশিত: ১৭:৩৪, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

গাজীপুরে আমলকী চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা, যাচ্ছে বিদেশে

কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম থেকে প্রতিবছর প্রায় ৩ কোটি টাকার আমলকী বিক্রি হচ্ছে দেশবিদেশের বাজারে। প্রায় ১২শ টন আমলকী উৎপন্ন হয় দুটি উপজেলায়। এমনিতে আমলকী চাষের জন্য উপজেলা দুটি পরিচিত। তবে গত কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে আমলকী চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে সুবাতাস বইছে।
দেশ-বিদেশের বাজারে অমৃত এই ভেষজ ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাষের জন্য স্বল্প পরিশ্রম, অধিক ফলন এবং সহজেই বাজারজাতকরণের সুবিধা থাকায় অন্যান্য ফল ও সবজির পরিবর্তে এখন ব্যাপকভাবে আমলকী চাষ করছেন কাপাসিয়া উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও কালীগঞ্জের বেশ কিছু গ্রামের চাষিরা। আর বিশেষ প্রক্রিয়া করায় সারা বছর ধরেই আমলকী পাওয়া যাচ্ছে।
কাপাসিয়া উপজেলার কাপাসিয়া উপজেলার তিলশুনিয়া, ডেফুলিয়া, ধরপাড়া, কোট বাজালিয়া, চাঁদপুর, জালিশা, হরিদাশপুর, বড়ছিট, ভাকোয়াদী, দুবুরিয়া, কামড়ামাশুক, পাপলা চামুরখী গ্রামে এবং কালীগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়া, দুবুরিয়া, জাঙ্গালিয়া, নড়ুন, দেওতলা প্রভৃতি গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে আমলকীর ব্যাপক চাষ হচ্ছে।
কয়েকটি গ্রাম পরিদর্শন করে কৃষক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্যান্য কৃষিপণ্যের চেয়ে আমলকী অনেক উচ্চমূল্যে বিক্রি করা যায়। পুরনো কৃষকদের পাশাপাশি অনেক নতুন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাও এগিয়ে আসছেন আমলকী চাষে। বর্তমানে দুই হাজারের মতো চাষি আমলকীর বাণিজ্যিক চাষে জড়িত। তাদের থেকে প্রতিবছর সর্বনিম্ন ৩০ হাজার মণ (স্থানীয় চাষিদের হিসাবে) আমলকী দেশে ও বিদেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা কেজি এবং মৌসুম ছাড়া সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা কেজি বিক্রি হয় আমলকী।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এসব আমলকী কিনে ঢাকার বিভিন্ন আড়ত (শ্যামজাবার, যাত্রাবাড়ী ও কারওয়ানবাজার) , গাজীপুরে ভোগড়া বাইপাস ও কোনাবাড়ী আড়ত, ঢাকার বিভিন্ন পাইকার, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি ও রপ্তানিকারকদের কাছে বিক্রি করেন। তারা জানান, সবচেয়ে বেশি আমলকী বিক্রি হয় ঢাকার কয়েক রপ্তানিকারকের কাছে, যারা এসব আমলকী ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি থাকেন।
কাপাসিয়া উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের সাবেক ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও আমলকী চাষি মোহাম্মদ আলী জানান, তার বাগানে একশর মতো গাছ রয়েছে। এর মধ্যে পুরনো ৪০টা গাছে ফলন আসে। এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টাকার আমলকী বিক্রি করেছেন। তিনি জানান, আমলকী চাষের আগে তার জমিতে বাঁশ বাগান ছিল, তাতে তেমন কোনো আয় হতো না।
তিলশুনিয়া এলাকার তরুণ উদ্যোক্তা মো. হারুন অর রশিদ জানান, অন্যান্য কৃষকের দেখাদেখি তিনি গত বছর পতিত ৬ বিঘা জমিতে আমলকীর চারা লাগিয়েছেন। এ বছরই ফল ধরা শুরু করেছে। তিনি আরও জানান, আমলকীর বাজার দর অনেক ভালো। চাষ করতেও পরিশ্রম কম লাগে, ফলনও হয় অনেক বেশি। তা ছাড়া সরসরি বাগান অগ্রিমও বিক্রি করে দেওয়া যায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আওলাদ হোসেন মোল্লা জানান, তিনি প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আমলকী সরবরাহ করেন। তার নিজের বাগান ও কৃষকদের বাগান বছর মেয়াদি কিনে বিগত ২৬ বছর ধরে এ ব্যবসা করছেন। তিনি প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার কেজি আমলকী বিক্রি করেন। প্রতিদিন তিন ট্রাক আমলকী ঢাকার আড়তগুলোতে যায়। শুধু গাজীপুরেই বিক্রি হয় ৪০০ কেজি। তিনি জানান, ঢাকার কয়েকজন রপ্তানিকারক রয়েছে, যারা তার কাছ থেকে আমলকী নিয়ে ইংল্যান্ড, কানাডা, সৌদি আরব, দুবাই ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। গত বছর করোনা মহামারীর সময় তিনি সর্বোচ্চ ১৪শ টাকা কেজি দরেও আমলকী বিক্রি করেছেন। তিনি আরও জানান, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বড় আকারের হাইব্রিড আমলকী আমদানি হয়। যখন এগুলো দেশের বাজারে প্রবেশ করে, তখন আমলকীর বাজারে ধস নামে। আমরা কেনা দামেও বিক্রি করতে পারি না। গুণে মানে ভালো না হলেও সস্তায় বিক্রি হয় বলে তখন দেশীয় আমলকীর দাম পড়ে যায়। এসব আমদানি বন্ধ না করলে সম্ভাবনাময় দেশীয় কৃষি পণ্যের বিশাল বাজার হাতছাড়া হয়ে যাবে।
কাপাসিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইসমত আরা বলেন, এ এলাকার মাটি ও পরিবেশ আমলকী চাষের জন্য বেশ উপযোগী। উপজেলায় ৩৫ হেক্টর জমিতে আমলকীর চাষ হচ্ছে, যেখান থেকে বছরে ১০৮ টন উৎপন্ন হচ্ছে। উৎপাদিত আমলকীর অর্ধেকের চেয়েও বেশি দেশের বাইরে রপ্তানি হয়। তিনি জানান, কৃষকরা আমলকী চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছে। করোনাকালে তারা অনেক বেশি দামে বিক্রি করছে। আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করছি এবং সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছি।
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, আমলকী বর্তমানে একটি অর্থকরী ফসল। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমরা কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের মধ্যে আমলকীর চাষ সম্প্রসারণে কাজ করছি। সারা বছর ধরে একটি আমলকী গাছ থেকে যাতে ফল পাওয়া যায় এর পরিচর্যার বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এতে ভালো একটি ফল পাওয়া যাচ্ছে। আমলকী চাষে গ্রামীণ অর্থনীতিতে একটা দারুণ ছোঁয়া লেগেছে।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন