ঢাকা,  শনিবার  ২০ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০ ধান চাষে অভাবনীয় সাফল্য

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ২৮ এপ্রিল ২০২২

বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০ ধান চাষে অভাবনীয় সাফল্য

বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত প্রথমবারের মতো ‘বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০’ জাতের ধান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় চাষ হয়েছে। প্রথম বছরেই চাষ করে এক অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন মো. তামজিদ খান  ও সাব্বির হোসেন নামে দুই কৃষক।

নতুন আবিষ্কার এ ধানটি উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের নুরপুর ও মনিয়ন্দ এলাকায় বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যে নিয়ে তারা জমিতে এ ধান চাষ করেন। এরই মধ্যে তাদের জমিতে ধান পাকতে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ধান কাটা-মাড়াই শেষ করে ঘরে তোলা যাবে বলে জানান কৃষক ও সংশ্লিষ্টরা।

অন্যান্য ধানের চেয়ে এই ধানের ফলন ভালো হওয়ায় সবার নজর কাড়ছে। ফলন ভালো রাখতে উপজেলা কৃষি অফিস তাদেরকে সার্বিকভাবে সহায়তায় করেন। কৃষকরা ‘বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০’ জাতের ধান বিঘা প্রতি ২৫ মণের উপরে ধান হবে আশা করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় রাজস্ব খাতে প্রদর্শনীর জন্য দুই কৃষককে ‘বঙ্গবন্ধু ব্রি-১০০’ ধানের বীজ দেওয়া হয়। এরপর ওই দুই কৃষক ধান চাষাবাদ করেন। বর্তমানে তাদের জমিতে ধান পাকতে শুরু করেছে। ধান কাটা ও মাড়াই কাজ করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

এ নতুন জাতের ধান মূলত ১৪৮ দিনের মধ্যেই ফসল কাটার মতো উপযুক্ত হয়ে উঠে। গড় ফলন  হেক্টর প্রতি ৬ থেকে ৭ টন হয়ে থাকে। অন্য যেকোনো জাতের চেয়ে কৃষকের আগ্রহ বেশি হবে এই ধান চাষের প্রতি। 

কৃষি বিভাগ জানায়, বঙ্গবন্ধু-১০০ ধানের বৈশিষ্ট্য হলো, আধুনিক উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য এ ধানে বিদ্যমান রয়েছে। গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে আকার আকৃতি ব্রি ধান ৭৪ এর মতো। ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা এবং পাতার রং সবুজ। পূর্ণবয়স্ক গাছের উচ্চতা ১০১ সেমি, ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন ১৬.৭ গ্রাম। চাল মাঝারি চিকন ও সাদা, জিংকের পরিমাণ ২৫.৭ মি গ্রাম/কেজি, যা ব্রি ধান ৭৪ এর চেয়ে বেশি (২৪.২মি.গ্রাম/কেজি) । চালে অ্যামাইলোজ ২৬.৮ শতাংশ এবং প্রোটিন ৭.৮ শতাংশ আছে।

এ ধানে রোগ-বালাই ও পোকা-মাকড় আক্রমণের পরিমাণ কম হওয়ায় অন্য ধানের চেয়ে  ফলন ভালো হওয়ায়  স্থানীয় কৃষকরা এ ধান আবাদে  ঝুঁকছেন। উপযুক্ত পরিচর্যা এবং আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এ মৌসুমে ধানের  বাম্পার ফলন হয়েছে।

তারা আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ বোরো মৌসুমের একটি জাত। এ জাতটি মূলত ২০০৬ সালে সংকরায়ণ করা হয় । পরে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা মাঠে ৫ বৎসর ফলন পরীক্ষা করা হয়। ২০২০ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি কর্তৃক ফলন পরীক্ষায় (পিভিটি) সন্তোষজনক হওয়ায় জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ছাড়করণ করা হয়।

কৃষক তামজিদ খান জানান, একই জমিতে প্রতিবছর একই জাতের ধান আবাদ করায় ওই ধানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমতে থাকে। যার ফলে জমিতে রোগবালাইয়ের আক্রমণ বৃদ্ধি পেয়ে ফলন কমে যাচ্ছে। প্রতিবছর নতুন নতুন জাতের ধান আবাদ করলে রোগবালাই থেকে অনেকটা রক্ষা পাওয়াসহ ফলন ও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের মুখে বঙ্গববন্ধু জাতের ধান সম্পর্কে শুনে ও তাদের  পরামর্শে এ মৌসুমে ৬০ শতক জায়গার মধ্যে বীজ উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে ধান চাষ করেন। জমিতে ধান পাকতে শুরু করেছে। অন্যান্য ধানের চেয়ে এ ধানের ফলন ও হয়েছে চোখে পড়ার মতো। আশা করছি দু’এক দিনের মধ্যে ধান কাটা হবে। বিঘাপ্রতি ২৫ থেকে ২৭ মণ ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করছি।

তিনি আরো বলেন, মূলত আমন ও বোরো মৌসুমে উন্নত জাতের বীজ উৎপাদন করে বাজারজাত করছি। প্রতি দুই মৌসুমে কৃষক পর্যায়ে ৩০-৩৫ টন বীজ উৎপাদন ও বাজারজাত করছি।  

কৃষক সাব্বির হোসেন বলেন, ব্রি-২৯ সহ অন্য জাতের ধান আবাদ করলে অন্তত পাঁচবার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়, কিন্তু নতুন এ জাতের জন্য দুই থেকে তিনবার কীটনাশক প্রয়োগ করলেই হয়। তাছাড়া সার ও প্রয়োগ কম করতে হয়।  আর অন্য জাতের তুলনায় দু’এক সপ্তাহ আগেই ধান ঘরে তুলতে পারায় ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়ে ফসল নষ্টের সম্ভাবনা কম থাকে।

উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বঙ্গবন্ধু জাতের জিংক সমৃদ্ধ ধান উদ্ভাবন করেন। এই ধানের আবাদ দ্রুত কৃষকদের মাঝে সম্প্রসারণ করতে কৃষি বিভাগ নানা উদ্যোগ নিয়েছে।  কৃষকদের সার বীজ সরবরাহ ও ধান চাষের পদ্ধতি শেখানো হচ্ছে। পোকামাকড়ের আক্রমণ ও রোগবালাই কম থাকায় উচ্চ ফলনশীল এ জাতের ধানকে জনপ্রিয় করার লক্ষে কৃষকদের উৎসাহিত করে চলেছে কৃষি বিভাগ।

তিনি আরো বলেন, এ উপজেলার প্রথম বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ চাষ করা হয়েছে। শেষ পযর্ন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকা এবং সেচ ব্যবস্থা জমিতে ভালো থাকায় জমিতে ধানের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। 

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন