ঢাকা,  শুক্রবার  ১৯ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

তুলার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকরা

প্রকাশিত: ১৭:০৫, ২৬ এপ্রিল ২০২২

তুলার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকরা

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চারটি জোনে তুলার চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এক সময়ের অনাবাদি ও পতিত জমিতে তুলার চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন তুলা চাষিরা।

অনেক প্রান্তিক ও বর্গাচাষি অর্থকরী এ ফসল চাষে দিন দিন ঝুঁকে পড়ছেন বলে যশোর আঞ্চলিক তুলা উন্নয়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে। লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তুলা চাষ।

যশোর আঞ্চলিক তুলা উন্নয়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও যশোরের বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বছর সবচেয়ে বেশি জমিতে তুলার চাষ হয়ে থাকে। পাশাপাশি মেহেরপুর, মাগুরা, নড়াইল, গোপালগঞ্জ ও রাজবাড়ি জেলায়ও তুলার চাষ হয়।

এ আঞ্চলিক অফিসের অধীনে চারটি জোনের আওতায় বর্তমানে মোট ৬৭টি তুলা ইউনিট চালু আছে। চলতি মৌসুমে (২০২১-২০২২) এ অঞ্চলের যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জোনের বিভিন্ন জেলায় মোট ১৬ হাজার ৬৩১ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হয়েছে।

আবাদকৃত জমিতে ৪৫ হাজার ৭শ’৩৫মেট্রিক টন তুলা উৎপাদিত হবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।

এর মধ্যে কুষ্টিয়া জোনে সবচেয়ে বেশি জমিতে তুলার আবাদ হয়েছে। এ জোনে ৪ হাজার ৪শ’৩৯ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হয়েছে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা জোনে ৪ হাজার ৪শ’৩২ হেক্টর জমিতে, ঝিনাইদহ জোনে ৪ হাজার ৪শ’৮ হেক্টর জমিতে এবং যশোর জোনে ৩ হাজার ৩শ’ ৫২হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হয়েছে।

প্রতিবছর জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে তুলার চাষ শুরু হয় এবং চলে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। জানুয়ারি মাস থেকে তুলা কর্তন শুরু হয়ে চলে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।

যশোর আঞ্চলিক তুলা উন্নয়ন অফিসের উপ-পরিচালক কামরুল হাসান জানান, তুলা চাষে এ অঞ্চলের কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তুলা উন্নয়ন অফিসের পক্ষ থেকে প্রতি মৌসুমে চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণ, পরামর্শ, মাঠ দিবস, উঠান বৈঠক, নতুন নতুন জাতের বীজ সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। এসব কারণে এক সময় যেসব চাষিরা তুলা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তারা নতুন করে তুলা চাষ শুরু করেছেন। অন্য যে কোন ফসলের চেয়ে তুলা চাষ বেশি লাভজনক বলে তিনি জানান।

তুলা বীজ থেকে উৎপাদিত ভৈজ্য তেল অধিক পুষ্টিগুন সম্পন্ন এবং কোলষ্টেরল তুলনামূলক কম। তুলার চাষ বাড়লে বাজারে এ তেলের সরবরাহও বাড়বে। এছাড়া তুলা বীজের খৈল অধিক প্রোটিন সম্মৃদ্ধ। এ খৈল গরু মোটাতাজাকরণ, পোল্ট্রি এবং মাছ চাষের উত্তম খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।

চলতি মৌসুমে হাইব্রিড হোয়াইট গোল্ড-১, রুপালি-১, সিবি হাইব্রিড-১, ডিএম-৪ এবং দেশীয় উচ্চ ফলনশীল সিবি-১৪ ও সিবি-১৫ জাতের তুলার ফলন সবচেয়ে বেশি হয়েছে।

এসব জাতের তুলা প্রতি বিঘায় ১৩ থেকে ১৪ মণ করে উৎপাদন হয়েছে। এ বছর তুলা প্রতিমণ মানভেদে ৩৪০০ টাকা থেকে ৩৬০০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চরাঞ্চলসহ অনাবাদি জমিতে তুলা চাষ করা গেলে শুধু কৃষকরাই লাভবান হবেন না, তুলা আমদানিতে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থেরও সাশ্রয় হবে। কৃষকদের বীজ তুলা উত্তোলন সহজতর করতে চলতি মৌসুমে চারটি জোনে পরীক্ষামূলকভাবে চারটি বীজ তুলা উত্তোলন মেশিন প্রদান করা হয়েছে। এ অঞ্চলে তুলার চাষাবাদে আধুনিকায়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামি ২০২২-২০২৩ মৌসুমে একই মেশিন দিয়ে তুলা গাছে কীটনাশক স্প্রে ও তুলা উত্তোলনের জন্য চার জোনে আরও ৪টি আধুনিক মানের বীজতুলা উত্তোলন যন্ত্র কাম পাওয়ার স্প্রে মেশিন প্রদান করা হবে এবং পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে ১ হাজারটি এ মেশিন প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান উপ-পরিচালক কামরুল হাসান।

যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের সফল তুলা চাষি মো. জামিরুল ইসলাম জানান, তিনি এবছর দেড় বিঘা জমিতে তুলার চাষ করেছেন। আবাদকৃত জমি থেকে ২৭ মণ তুলা ঘরে তুলেছেন। এ বছর তুলার আশানুরুপ ফলন হয়েছে। তার (জামিরুল) তুলা চাষ দেখে আশপাশের কৃষকরাও তুলা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

প্রতি বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের তুলা চাষে গড়ে খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এ বছর তিনি প্রায় ১ লাখ টাকার তুলা বিক্রি করবেন বলে জানান। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে তুলা চাষে আগাছা নিয়ন্ত্রণ ও তুলা উত্তোলনের জন্য চাষি পর্যায়ে মেশিন প্রদান করা হলে আরও অনেকেই অর্থকরী ফসল তুলা চাষে আগ্রহী হবেন বলে তিনি জানান।

একাধিক চাষি জানান, তুলা চাষের প্রধান অন্তরায় আগাছা নিয়ন্ত্রণ ও তুলা উত্তোলন সহজতর করে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে তুলা চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেছেন যশোর আঞ্চলের উপ-পরিচালক কামরুল হাসান।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন