ঢাকা,  শুক্রবার  ২৯ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

বোরো আবাদে ব্যস্ত কৃষক

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ১১ জানুয়ারি ২০২২

বোরো আবাদে ব্যস্ত কৃষক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় গত কয়েক বছর ধরে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। এ জন্য স্থানীয় কৃষকরা উৎসাহ নিয়ে ধান আবাদ করেছেন। গত আমন মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন ও বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় বেজায় খুশি কৃষকরা। 

এরইমধ্যে আমন ধান কাটা শেষ, শুরু হয়েছে বোরো ধান আবাদ। স্থানীয় কৃষকরা কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে চলতি মৌসুমে বোরো ধান আবাদ পুরোদমে শুরু করেছে। পৌর এলাকাসহ উপজেলার সর্বত্র চলছে বোরো ধান আবাদের উৎসবের আমেজ। 

কৃষকরা জমিতে পানি সেচ, হালচাষ, সার প্রয়োগ, বীজ উঠানো ও প্রস্তুতকৃত জমিতে চারা রোপণে এক প্রকার দিনভর ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত আমন মৌসুম থেকে এ মৌসুমে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বেশি ধান আবাদ করা হচ্ছে। আমনের চাইতে চলতি বোরো আবাদে জমিতে ফলন আরো ভালো করতে সর্বাত্ত্বক চেষ্টা করবেন কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে বোরো চাষ আবাদে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। রোপণকৃত জমির মধ্যে উন্নতফলনশীল বীজসহ বিভিন্ন রকমের বীজ রয়েছে। 

পৌর এলাকাসহ উপজেলার সর্বত্র চলছে বোরো ধান আবাদের উৎসবের আমেজ। 

সরেজমিনে পৌর এলাকায় তরাগন, দেবগ্রাম, নারায়ণপুর, খড়মপুর উপজেলার নুরপুর, হীরাপুর, উমেদপুর, বাউতলা, সাতপাড়া, ধাতুরপহেলা, তোলাবাড়ি, কুসুমবাড়ি, নুনাসারসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয় কৃষকরা বোরো ধান আবাদে জমি প্রস্তুত, চারা উত্তোলন ও রোপণের কাজে তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে বোরো চাষ আবাদে শ্রমিক সংকট থাকায় মজুরিও বৃদ্ধি পেয়েছে। 

এদিকে বেশ কয়েক দিন ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীত থাকায় বীজ তলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয় কৃষকরা এক প্রকার চিন্তিত হয়ে পড়েন। তবে কৃষি বিভাগ থেকে আক্রান্ত বীজতলা রক্ষায় সার্বিকভাবে পরামর্শ দেওয়ায় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। শীতকে উপেক্ষা করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পযর্ন্ত জমিতে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ জমিতে হাল চাষ দিচ্ছেন, কেউবা জমির আইলে কোদাল পাড়া কিংবা জৈব সার বিতরণে কাজ করছেন। কেউ দিচ্ছেন সেচ। আনুষাঙ্গিক কাজ শেষে বীজতলা থেকে চারা তুলে তা রোপণ করছেন জমিতে। 

উপজেলার কাউজবাড়ি গ্রামের কৃষক মো. সহিদ মিয়া বলেন, চলতি মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হবে। এরইমধ্যে তার ৪ বিঘা জমিতে ধান চারা লাগানো হয়। 

তিনি আরো বলেন, প্রচণ্ড শীত থাকায় শ্রমিক সংকট দেখা দেয়ার অতিরিক্ত মজুরি দিয়ে জমিতে কাজ করতে হচ্ছে। আশা করছি দু’ সপ্তাহের মধ্যে বাকী জমিগুলোতে চারা রোপণের কাজ শেষ হবে। উচ্চ ফলনশীল ব্রি-২৮, ২৯, ৮৮, ৮৪ হাইব্রিড জাতের ধান এ মৌসুমে তিনি আবাদ করছেন। এসব ধান ফলন বাজার মূল্য ভালো থাকায় গত মৌসুমেও আবাদ করেছেন।

পৌর এলাকাসহ উপজেলার সর্বত্র চলছে বোরো ধান আবাদের উৎসবের আমেজ। 

কৃষক মো. বাচ্চু মিয়া  জানান, গত আমন মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ১৭-২০ মণ ধান পেয়েছেন। তাই এ মৌসুমে  ১৫ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করছেন তিনি। এরইমধ্যে ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চারা লাগানো শেষ হয়েছে বলে জানায়। 

পৌর শহরের তারাগণ এলাকার মো. আলম খাঁ বলেন, এক সময় ধান আবাদের প্রতি তার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। গত কয়েক বছর ধরে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান আবাদে ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় আগ্রহ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত আমন মৌসুমে ৮ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করে আশানুরূপ ফলন পান। চলতি বোরো মৌসুমে তিনি ১২ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করবেন। 

এরইমধ্যে তিনি হাল চাষ, সেচপানি দিয়ে ধান আবাদ করতে জমি প্রস্তুুত করেছেন। তিনি আশা করছেন এক সপ্তাহের মধ্যে জমিগুলোতে চারা রোপণের কাজ শেষ হবে। কৃষক হোসেন মিয়া বলেন, গত মৌসুমে ধানের ফলন ভালো হওয়ায় এ মৌসুমে তিনি আরো ৫ বিঘা বেশি জমিতে ধান আবাদ করবেন। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, এরই মধ্যে আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে। শীতের  কারণে বোরো ধান আবাদে পিছিয়ে নেই কৃষকরা। স্থানীয় কৃষকরা জমি প্রস্তুত করে পুরোদমে বোরো ধান আবাদ শুরু করেছেন। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে এবং সেচ ব্যবস্থা ঠিকমতো ভাল থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে। 

তিনি বলেন, কেউ যাতে সিন্ডিকেট তৈরি করে সারের দাম বাড়াতে না পারে সে দিকে অফিসের সংশ্লিষ্ট লোকজন নজর রাখছি। ফলন ভালো রাখতে স্থানীয় কৃষকদেরকে প্রতিনিয়ত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানায়।  

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন