ঢাকা,  মঙ্গলবার  ২৩ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

পিরোজপুরে সবুজ মাল্টা চাষে বাড়ছে কৃষকের আগ্রহ

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২৫ অক্টোবর ২০২১

পিরোজপুরে সবুজ মাল্টা চাষে বাড়ছে কৃষকের আগ্রহ

বাগানে ঢুকতেই চারদিকে সবুজের হাতছানি। সবুজ পাতায় বৃষ্টির ফোঁটা, কখনো বাতাসে দোল খাচ্ছে তরতাজা গাছের ডালগুলো। সবুজ পাতা আর মাল্টার ভারে নুয়ে পড়েছে ডালগুলো। দৃশ্যটি দেখলে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে। সঠিকভাবে পরিচর্যা আর জৈবসার ব্যবহারের ফলে গাছগুলো দ্রুত বেড়ে উঠেছে মায়াবী ঢংয়ে।
পতিত জমিতে বাগান করার পর জৈব সার ব্যবহার করে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত মিষ্টি আর রসালো মাল্টার ফলন ফলিয়ে  এলাকায় নজর কেড়েছেন পিরোজপুরের ইন্দরকানী উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গাজী আব্দুল জব্বার ও রাসেল গাজী এবং সাংবাদিক শাহাদাত বাবু।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের  পেছনে ৫০ শতাংশ পতিত জমিতে ২০১৭ সালে মাল্টার চাষ শুরু করেন রাসেল গাজী। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রদর্শনীর জন্য প্রথমে তাদেরকে ১০০টি বারি-১ জাতের চারা দেওয়া হয়। এরপর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আরো ১৫০টি বারি-১ জাতের চারা সংগ্রহ করেন তাঁরা। বাগান প্রস্তুত করতে প্রথমে লাখ টাকার মতো খরচ হয়। তবে এখন প্রতিবছর বাগান রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুসঙ্গিক ২০ হাজার টাকার মতো খরচ পড়ে তাদের।
এ বাগানে মাল্টার পাশাপাশি রয়েছে সাথি ফসল । সাথি ফসল হিসেবে পেঁপে, লাউ, চাল কুমড়া, ঝিঙ্গা ও করলার চাষ করেছেন কৃষকরা। এছাড়া এর সঙ্গে করা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ। মাল্টার প্রদর্শনী বাগান এবং টিভিতে কৃষিভিত্তিক অনুষ্ঠানে মাল্টার ওপর প্রামাণ্যচিত্র দেখে বাগান তৈরির ব্যাপারে আগ্রহ জন্মায় তাঁদের। এরপর উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে তাঁরা বাগান করেন। চারা রোপণের মাত্র দুই বছরের মাথায়ই গাছে ফলন ধরে। প্রথম বছর তারা প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রি করেন। তবে এবছর তারা প্রায় এক লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পেরেছেন। আগামীতে  ফলন আরো বেশি হবে বলে জানান বাগান মালিক। তাঁদের এ সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই এখন মাল্টা চাষের প্রতি অধিক আগ্রহী হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় এবার ১৭ একর জমিতে বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ করা হয়েছে। ছোট-বড় মিলিয়ে ৫৬ টির মতো মাল্টা বাগান রয়েছে এ উপজেলায়। বারি-১ মাল্টা উচ্চ ফলনশীল সুস্বাদু  একটি ফল। সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে গাছে ফল ধরে। এটি পরিপক্ব হয় সেপ্টেম্বরের দিকে। সেপ্টেম্বর ও  অক্টোবর মাসে মাল্টার ফল পাওয়ায় যায়। ফুল আসা থেকে শুরু করে ফল পাকতে সময় লাগে প্রায় মাস ছয়েকের মতো। ফলন ভালো হলে প্রতিটি গাছ থেকে বছরে প্রায় ২০০-৩০০টির মতো মাল্টা পাওয়া যায়। এটি ভিটামিন- সি সমৃদ্ধ একটি ফল। স্থানীয় কৃষকরা এখন মৌসুমী ফল পেয়ারা, আম, কাঁঠাল, লিচু, বড়ইর পাশাপাশি দেশি  জাতের মাল্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন এবং সফলতাও পাচ্ছেন।
বাগান মালিক আব্দুল জব্বার গাজী জানান, দেশি জাতের এ মাল্টা বেশ বড় এবং খেতে রসালো ও মিষ্টি।  প্রতিবছর ভাদ্র থেকে আশ্বিন মাসের মধ্যে ফল বিক্রি করা হয়। ক্রেতা-দোকানির কাছে আমদানি করা হলদে রঙের চেয়ে এখানকার সবুজ মাল্টার কদর বেশি। আগামীতে এর ফলন আরো বাড়বে বলে আশাবাদী তাঁরা।
মাল্টা চাষি রাসেল গাজী ও শাহাদাত হোসনে বাবু জানান, বিভিন্ন কৃষিপণ্যের থেকে মাল্টা অল্প খরচ ও কম খাটুনিতে বেশি লাভ পাওয়া যাচ্ছে। মাল্টা বাগান থেকে স্থানীয় ফল ব্যবসায়ী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফল ব্যবসায়ীরা মাল্টা কিনে নিয়ে যান। বাগান থেকে প্রতিকেজি পাইকারি ৯০ টাকা দরে কিনে বাজারে তা ১১০ -১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। আগামীতে আরো বেশি জায়গায় মাল্টার চারা রোপণের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।
ইন্দুরকানী  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়রা সিদ্দিকা জানান, মাল্টা পিরোজপুর জেলার একটি ব্র্যান্ডিং। এ অঞ্চলের মাটি মাল্টা চাষের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। ফলন ভালো হওয়ায় এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবছর মাল্টার বাগান বৃদ্ধি পাচ্ছে। শখের বশে অধিকাংশ বাড়িতে মাল্টার চারা লাগালেও এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাল্টার বাগান করে লাভবান হচ্ছেন অনেকে। সম্ভাবনাময় মাল্টা চাষ আমাদের দেশে সমৃদ্ধির হাতছানি দিচ্ছে। ফলটি চাষ করে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি।

গাজীপুর কথা

    আরো পড়ুন