ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৮ মার্চ ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

তরমুজ দিয়ে গুড় উৎপাদন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৪ অক্টোবর ২০২১

তরমুজ দিয়ে গুড় উৎপাদন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল

তিন বছর ধরে চেষ্টা করছেন তরমুজ থেকে গুড় তৈরির। শেষ পর্যন্ত সফলতা পেয়ছেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সাহস ইউনিয়নের ছোটবন্দ গ্রামের কৃষক মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় বিক্রির অযোগ্য তরমুজ দিয়ে গুড় উৎপাদন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল। তাইতো তার বাড়িতে এখন সবাই ছুটছেন তরমুজের গুড় খেতে। এলাকায় এর নাম হয়েছে ‘তোগুড়’।
মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল জানান, ২০১০ সাল থেকে তিনি মৌসুম এবং মৌসুম ছাড়াও তরমুজ চাষ করে আসছেন। পর পর ১২ বছর তরমুজ চাষ করে এলাকায় সফল তরমুজ চাষি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।
জানা যায়, বরাবরই তরমুজ উচ্চ মূল্যের ফসল। তবে কিছু কিছু তরমুজ আকার আকৃতিতে কিছুটা ছোট হয় যা বাজারে বিক্রি করা যায় না। এ ধরনের তরমুজ এলাকায় ‘ক্যাট’ নামে পরিচিত। অনেক সময় মাঠেই নষ্ট হয়ে যায় এসব তরমুজ। আবার কখনো বৃষ্টিতে পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।
মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল ভাবতে থাকেন বিক্রির অযোগ্য এসব ছোট তরমুজ কোনোভাবে কাজে লাগানো যায় কি না। যেই ভাবা সেই কাজ। ছোট আর আঁকাবাঁকা তরমুজগুলোকে বাড়িতে এনে তা থেকে রস বের করে গুড় তৈরি কাজে নেমে পড়েন তিনি।
মৃত্যুঞ্জয় জানান, চলতি বছরের ২২ সেপ্টেম্বর কোনোরকম উন্নত প্রযুক্তি ছাড়াই একেবারে দেশিয় প্রযুক্তিতে ‘ক্যাট’ তরমুজ কেটে ভেতরের লাল অংশ বের করেন তিনি। এরপর নেটের মাধ্যমে নির্যাস বের করে চুলায় জাল দিয়ে গুড় তৈরি করেন। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি এ গুড় অত্যন্ত সুস্বাদু এবং অনেক দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘তরমুজের রসে মিষ্টতা থাকার কারণে আমার মনে হয়েছিল এর থেকে গুড় তৈরি করা সম্ভব এবং আমি সেটা চেষ্টা করে সফলতা পেয়েছি। আমি এ পর্যন্ত প্রায় ৮ থেকে ১০ কেজি গুড় তৈরি করেছি। আমি নিজে, গ্রামের প্রতিবেশী, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ অনেকেই খেয়েছেন। তারা সকলেই প্রশংসা করেছেন। এমনকি গ্রামের কিছু লোক ৩০০ টাকা কেজি দরে কিনতে চেয়েছেন।’
মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল জানান, গুড় উৎপাদনের খবর পেয়ে আশেপাশের গ্রাম থেকে প্রতিদিন শত শত লোক দেখতে আসছে কিভাবে তরমুজ থেকে গুড় উৎপাদন করা হয়। এলাকার অনেক কৃষক আগামী তরমুজের সিজনে তরমুজ চাষ করে গুড় উৎপাদন করে বাজারজাত করার কথা ভাবছেন। আগামীতে তরমুজের রস থেকে গুড় উৎপাদনের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করা হবে বলেও জানান তিনি।
সাহস ইউনিয়নের ছোটবন্দ গ্রামের কৃষক শিবপদ মন্ডল বলেন, ‘আমি প্রায় প্রতিদিনই মৃত্যুঞ্জয় মন্ডলের তরমুজ থেকে গুড় তৈরির দৃশ্য দেখতে আসি। আমি আগামী মৌসুমে তরমুজ থেকে গুড় তৈরি করার চিন্তাভাবনা করছি।’
সাবেক ইউপি সদস্য রণজিৎ মন্ডল বলেন, ‘মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল পৈত্রিক সূত্রে কৃষি পেশায় জড়িত। তিনি বিভিন্ন সময়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় তরমুজ থেকে গুড় উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। আমি তার কাছ থেকে কয়েক কেজি তরমুজ গুড় কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করায় মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল আমাকে আশ্বাস দিয়েছে তরমুজের গুড় তৈরি করে দেবেন।’
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোছাদ্দেক হোসেন জানান, দেশের গুড় শিল্প দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। একদিকে তাল, খেজুর গাছের সংখ্যা যেমন কমছে তেমনি কমেছে গাছির সংখ্যাও। তাই তরমুজের গুড় কৃষিতে এক দারুণ অর্জন। উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকা তরমুজ চাষের অত্যন্ত উপযোগী। তরমুজের মৌসুমে কৃষক অনেক সময় ন্যায্যমূল্য পান না এবং তরমুজের ক্যাটগুলো বিক্রি হয়না। বাণিজ্যিকভাবে এসব তরমুজ নিয়ে গুড় তৈরি করলে কৃষক একদিকে যেমন তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবে, অন্যদিকে ফসল অপচয় রোধ হবে।
তিনি আরও জানান, মৃত্যুঞ্জয়ের মত কৃষকদেরকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী এবং মাঠে পরামর্শসহ অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আগামীতে তাদের আরও সহায়তা করা হবে বলেও জানান তিনি।

গাজীপুর কথা

আরো পড়ুন