ঢাকা,  মঙ্গলবার  ২৩ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

দুম্বা ও ছাগল পালন করে সফল উদ্যোক্তা রেজা

প্রকাশিত: ০৭:৪৯, ২৯ জুলাই ২০২১

দুম্বা ও ছাগল পালন করে সফল উদ্যোক্তা রেজা

রেজাউল রেজা। রংপুর সিটি কর্পোরেশন কভিড কালেকশন টিমের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ও তরুণ খামারি। দেড় বছর আছে কলোনাকালে অলস বসে না থেকে ১০ লাখ টাকা মূলধন নিয়ে শুরু করেন ‘উদ্যোক্তা গট ফার্ম’ নামে একটি ছাগলের খামার।

শিরোহী, হরিয়ানা ও তোতাপরি এই তিন প্রজাতির ২৪টি ছাগল দিয়ে শুরু করা খামারে এখন ছাগলের সংখ্যা ৫৭টি। সাথে ৬ মাস আগে যুক্ত করেছেন ভারতের রাজস্থানের ১১টি দুম্বা। ছাগল ও দুম্বা পালনে বছরে প্রায় ২০ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন রেজা।
পীরগাছা উপজেলার সাতদারগা মিয়াপাড়া এলাকায় উন্নতজাতের একটি ছাগলের খামারের পাশাপাশি আরব মরুর দুম্বা পালন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। এখন প্রতিদিন তার এই খামারে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দুম্বা দেখতে ছুটে আসছেন শত শত মানুষ।

সরেজমিনে খামারটি ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির সামনে প্রায় চার শতাংশ জমির উঠান ঘিরে দুম্বা ও ছাগলগুলোকে খাদ্য দেওয়াসহ নিবিড়ভাবে পরিচর্যা করছেন খামারি রেজা। পাশে ছোট্ট একটা বাঁশের মাচাযুক্ত টিনের চালা, যেখানে রোদ বৃষ্টি আর রাত্রিকালীন সময়ে অবস্থান করে এই ছাগলগুলো।
এবারে রাজধানীর একটি কোরবানির হাটে ৫টি দুম্বা বিক্রি করেছেন ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে মোট সাড়ে ১১ লাখ টাকা। যা থেকে তার লাভ হয়েছে একেকটি দুম্বায় ৭০ হাজার টাকা করে মোট সাড়ে তিন লাখ টাকা। হালকা জ্বর সর্দি ছাড়া তেমন কোনো বড় ধরনের রোগ না হওয়ার এই অঞ্চলেও দুম্বা পালনে অর্থনেতিক সম্ভাবনার কথা বললেন তরুণ খামারি।
রেজাউল রেজা বলেন, বর্তমানে তার খামারে তিনটি দুম্বা আর দুমাস গেলেই বাচ্চা দেবে। সেগুলোও নিবিড়ভাবে পরিচর্যা করা হচ্ছে। টার্কি জাতীয় এসব দুম্বা ৬ মাস পর পর বাচ্চা দেয় এবং সেই বাচ্চাগুলো ৮-১০ মাসের মধ্যে ৮০-১২০ কেজি ওজনের হয়ে বিক্রির উপযোগী হয়।
 
তিন প্রজাতির ছাগলের পাশাপাশি দুম্বা পালনে বাড়তি তেমন কোনো খরচ হয় না। গত ১০ মাস আগে দুটি দুম্বা এক লাখ ৪০ হাজার টাকা করে কিনে এনে ৪ মাস লালন-পালন করে রোগবালাই কম হওয়ায় আবারও ৯টি দুম্বা কিনে খামারে আনা হয়।

কিনে আনা একেকটি দুম্বাতে খাদ্য ও চিকিৎসা বাবদ মাসে খরচ হয় দেড় হাজার টাকা। ছয় মাস পর প্রতি দুম্বা বিক্রি করে আয় হয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা করে। বর্তমানে তার খামারের সব ছাগল ও দুম্বার বাজার মুল্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকা বলে জানান তিনি।
 
২৪টি ছাগল দিয়ে শুরু করে সেই ছাগলের বাচ্চা ও মা মিলে দেড় বছরে মোট ৮০টির অধিক ছাগল হয়েছিল। সেখান থেকে কিছু পরিপক্ক ছাগল বিক্রি করে নতুন বিনিয়োগ ছাড়াই অন্যান্য খরচ দিয়েও আজ তার খামারের এই অবস্থা। দুম্বা পালনে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখায় ভবিষ্যতে খামারটির আকার বড় করে পূর্ণাঙ্গ একটি দুম্বার খামারের স্বপ্নের কথা ব্যক্ত করেন রেজা।

খামারে সার্বক্ষণিক পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা নুরজামান বলেন, ছাগল ও দুম্বা পালনে ভিন্নতা না থাকায় আলাদা করে রাখার প্রয়োজন হয় না। আর খাবারও একইসঙ্গে খাওয়ানো হয়। সকাল-দুপুর আর বিকাল এই তিন সময়ে ঘাসের পাশাপাশি গম ও ভুট্টার ভুসি খাওয়ানো হয়। 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. সামসুজ্জোহা বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় দুম্বা পালন হয় শুনেছি, কিন্তু রংপুরের পীরগাছায় রেজা প্রথম শুরু করেছেন। আমরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সার্বক্ষণিক দুম্বাগুলোর চিকিৎসাসহ খামারটির খোজখবর রাখছি। আমরা খোঁজখবর নিয়ে যতটুকু জেনেছি দুম্বায় তুলনামূলক রোগবালাই কম। তাই এই অঞ্চলের আবহাওয়ার সাথে এডজাস্ট হলে নতুন খামারি তৈরির মাধ্যমে দুম্বা পালনে উৎসাহ দেওয়া হবে।

গাজীপুর কথা

    আরো পড়ুন