ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

নামাজে ঐতিহাসিক ৩ পরিবর্তন

প্রকাশিত: ১৪:৩৭, ২৫ জুন ২০২০

নামাজে ঐতিহাসিক ৩ পরিবর্তন

ইসলামের প্রধান ইবাদত নামাজ। এ নামাজে ঐতিহাসিক তিনটি পরিবর্তন রয়েছে। নামাজের এ তিন পরিবর্তন বিশ্বনবির সময়েই চূড়ান্ত হয়েছিল। এখন যেভাবে নামাজ পড়া হয়, ইসলামের প্রাথমিক যুগে তথা মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পরবর্তী সময়ে সেভাবে পড়া হতো না। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আশা-আকাঙ্খা, সাহাবায়ে কেরামের স্বপ্ন ও সম্মিলিত চিন্তা-ভাবনায় ঐতিহাসিকভাবে নামাজে আনা হয়েছে ৩ পরিবর্তন। যা এখনও বিদ্যমান। চলবে কেয়ামত পর্যন্ত। আর তাহলো-

মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে, হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘নামাজে তিনটি অবস্থার পরিবর্তন হয়। নামাজের এ পরিবর্তনগুলো তুলে ধরা হলো-

> কেবলা নির্ধারণ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরতের পরও দীর্ঘ ১৬/১৭ মাস বাইতুল মুকাদ্দাস তথা মসজিদে আকসার দিকে ফিরেই নামাজ আদায় করেন। কিন্তু বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একান্ত আশা ছিল বাইতুল্লাহ তথা কাবা শরিফের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করা। পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলার নির্দেশে নামাজে মুসলমানের কেবলাকে বাইতুল্লাহর দিকে পরিবর্তন করা হয়।

২. আজানের প্রবর্তন
ইসলামের প্রথম দিকে নামাজের জন্য আজানের প্রচলন ছিল না। নামাজের সময় হয়ে একে অপরকে ডাকাডাকি করতেন। সবাই একত্রিত হলে নামাজ আদায় করতেন। একটা সময় এভাবে ডাকা-ডাকি করে নামাজ পড়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। তারপর নামাজের জন্য আজানের প্রবর্তন করা হয়।

আজানের বর্তমান এ আহ্বান বা শব্দগুলো হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ বিন আব্দ-ই-রাব্বিহ রাদিয়াল্লাহু আনহু নামে এক আনসারি সাহাবি স্বপ্নে লাভ করেন। অতপর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে আজানের এ শব্দগুলো বর্ণনা করেন। রাসুুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজানের এ শব্দগুলো হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শিখিয়ে দেয়ার জন্য বলেন। তারপর থেকেই জামাআতে নামাজ আদায় করার জন্য মানুষকে আজানের মাধ্যমে আহ্বান করা হয়।

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে আজানের শব্দের এ স্বপ্ন হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু দেখেছেন। কিন্তু হজরত যায়েদ বিশ্বনবি দরবারে আগে এসে বর্ণনা করেন।

> ছুটে যাওয়া নামাজ পড়ার নিয়ম
ইসামের প্রথম যুগে জামাআতে নামাজ পড়ার সময় যদি কেউ শুরু থেকে নামাজ না পেতেন তবে, কত রাকাআত নামাজ পড়া হয়েছে তা ইশারায় জেনে নিয়ে তা একাএকা পড়ে তবে জামাআতে ইমামের সঙ্গে অংশগ্রহণ করতে হতো।

একবার হজরত মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু নামাজ পড়তে এসে দেখলেন জামাআত শুরু হয়ে গেছে। তখন তিনি বললেন, 'আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জামাআতে নামাজ পড়ার সময় যে অবস্থায় পাবো, সেখান থেকে নামাজ পড়া শুরু করবো এবং জামাআত শেষ হওয়ার পর ছুটে যাওয়া নামাজ আদায় করবো।

অতপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামাজ শেষ হওয়ার পর হজরত মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহু যথারীতি ছুটে যাওয়া নামাজ আদায় করেন।

তখন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মুয়াজ তোমাদের জন্য উত্তম পন্থা বের করেছেন। তোমরাও এখন হতে এরূপই করবে।

অর্থাৎ নামাজের জামাআত শুরু হলে যে যেখানে এসে নামাজ পাবে সেখান থেকেই নামাজ শুরু করবে। ইমামের নামাজ শেষ হলে ছুঁটে যাওয়া নামাজ আদায় করে তা পূর্ণ করে নেবে।

ইসলামের প্রধান ইবাদত নামাজের এ তিন পরিবর্তন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়েই চূড়ান্ত হয়। আর সে অবস্থাতেই আজও নামাজ পালন করছেন মুসলিম উম্মাহ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ নিয়েমেই নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

গাজীপুর কথা