ঢাকা,  শুক্রবার  ২৬ এপ্রিল ২০২৪

Gazipur Kotha | গাজীপুর কথা

এক নজরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

প্রকাশিত: ১৪:২৮, ১৫ নভেম্বর ২০২০

এক নজরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। যিনি ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র অভিনেতা। শুধু অভিনয়ের জন্যই তিনি খ্যাত ছিলেন না। মঞ্চ অভিনেতা, লেখক, অনুবাদক এবং আবৃত্তিকার হিসেবেও তার খ্যাতি ছিলো আকাশছোঁয়া। তবে আবৃত্তি শিল্পি হিসেবে তার নাম অত্যন্ত সম্ভ্রমের সঙ্গেই উচ্চারিত হয়।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ৩৪টি সিনেমার মধ্যে ১৪টিতে অভিনয় করেছেন। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রথম সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় 'অপুর সংসার' ছবিতে অভিনয় করেন। পরবর্তীকালে তিনি মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মত পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছিলেন। সিনেমা ছাড়াও তিনি বহু নাটক, যাত্রা, এবং টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছিলেন। অভিনয় ছাড়া তিনি নাটক ও কবিতা লিখেছেন, নাটক পরিচালনা করেছেন।

১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে চট্টোপাধ্যায় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এই কিংবদন্তি। চট্টোপাধ্যায় পরিবারের আদি বাড়ি ছিলো বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কাছে কয়া গ্রামে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের দাদার আমল থেকে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে থাকতে শুরু করেন। সৌমিত্রর পিতা কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করতেন এবং প্রতি সপ্তাহান্তে বাড়ি আসতেন। সৌমিত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন কৃষ্ণনগরের সেন্ট জন্স বিদ্যালয়ে। তারপর পিতার চাকরি বদলের কারণে সৌমিত্রর বিদ্যালয়ও বদল হতে থাকে। মূলত বাবার চাকরির কারণেই তাকে কলকাতার বাসিন্দা হতে হয়। কলকাতায় উনি বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেন হাওড়া জিলা স্কুল থেকে। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমহার্স্ট স্ট্রীট কলেজ থেকে প্রথমে আইএসসি এবং পরে বিএ অনার্স (বাংলা) পাস করার পর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ অফ আর্টস-এ দু-বছর পড়াশোনা করেন। তিনি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন।

তার অভিনীত চরিত্রগুলোর ভেতরে সবথেকে জনপ্রিয় হলো ফেলুদা। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় 'সোনার কেল্লা' এবং 'জয় বাবা ফেলুনাথ' ছবিতে ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। প্রথমে ফেলুদা চরিত্রে তার চেয়েও ভালো কাউকে নেয়ার ইচ্ছা থাকলেও তার অভিনীত ফেলুদার প্রথম ছবি 'সোনার কেল্লা' বের হওয়ার পর সত্যজিৎ রায় স্বীকার করেন যে, তার চেয়ে ভালো আর কেউ ছবিটি করতে পারতনা।

চলতি মহামারির কারণে দীর্ঘদিন টলিউড ফিল্মইন্ডাস্ট্রির শুটিং বন্ধ ছিলো। এরপর স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবারো শুটিং শুরু হয়। যথাযথ সুরক্ষা মেনে শুটিংয়ে ফিরেছিলেন সৌমিত্র। নিজেকে নিয়ে তৈরি একটি তথ্যচিত্রের শুটিং করছিলেন। এর মধ্যে তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ৬ অক্টোবর কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এই শিল্পীকে। এরপর করোনামুক্ত হলেও তার অন্যান্য শারীরিক সমস্যা বাড়তে থাকে।

অবশেষে রোববার (১৫ নভেম্বর) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

বাংলা সিনেমার এই কিংবদন্তির মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে ভারতীয় সিনেমার আঙিনায়। অভিনেতার মৃত্যুর বেদনার সুর বিষাদের বাঁশি হয়ে বেজেছে বাংলাদেশেও। এ বাংলাতেও তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন সৌমিত্র। এখানকার শিল্প-সংস্কৃতিকে আজীবন ভালোবেসেছেন সৌমিত্র। বাংলাদেশ তার পিতৃভিটা, তাই এদেশের প্রতি ছিলো তার বিশেষ দুর্বলতা।

গাজীপুর কথা